বহু দিনের অভ্যাস তাই ছাড়তে পারেনি, কাদামাটি দিয়ে কিছু পুতুল, মাটি দিয়ে তৈরী তাই খেলনা বানিয়েছি- জানি এবার মেলা, বর্ষবরণ বন্ধ, তবুও অভ্যাস ছাড়তে পারিনি’- জানালেন বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার উজিরপুর পাল পাড়ার পূর্ণিমা রানী।
শুধু উজিরপুর নয় গৌরনদী উপজেলার গৈলা পাল পাড়ার সন্ধ্যা রানী, ও শিবু পাল সহ বরিশাল বিভাগের ২ ডজন পাল পাড়ার পাঁচ শতাাধিক পরিবার যারা মেলায় মাটির খেলনা তৈরী করে থাকে, তারা ভীষণ মনকষ্টে আছে। গতবছরের মতো এবারেও তাদের একমাত্র উপার্জানের পথ বন্ধ। পাল পাড়ার সহজ সরল মানুষরা জানে না এর থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসবে। উপার্জন হারিয়ে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছে শত বছরের এই ঐতিহ্যগত পেশা।
প্রচলিত ধারার ঐতিহ্যগত পণ্য, যারা মেলার উপর নির্ভরশীল তারই মূলত এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে, জানালেন, বরিশাল মৃৎশিল্প সম্মেলন ও সম্মাননা এর উপদেষ্টা বিশ্বেশ্বর পাল
পটুয়াখালী উপজেলার বাউফল উপজেলার মদনপুরা পালপাড়ার কমল পাল জানান, তারা মাটি দিয়ে প্লেট, গ্লাস, বাটি সহ তৈজসপত্র তৈরী করে থাকেন। পহেলা বৈশাখ উৎসবে এর দারুণ চাহিদা থাকে। কিন্ত এবার গাড়ী চলাচল না করায় তারা ঢাকায় মালামাল পাঠাতে পারেনি। এর ফলে মদনপুরা ও বগা এলাকার ১০/১২ জন মৃৎশিল্পীদের অর্ধকোটি টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে।
ঝালকাঠীর শিমুলেশ্বর গ্রামের তপন পাল জানান, তিনি সাধারণত চা এর কাপ ও খেলনা বানান, এবারে মেলা না হওয়ায় তার কোন অর্ডার নেই। সামনের একটি বছর কিভাবে চলবে এ নিয়েই তার চিন্তা বাড়ছে।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের বাসিন্দা বুলি রানী পাল জানান, তারা সামান্য খেলনা তৈরী করলেও কোন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
বরিশাল মৃৎশিল্প সম্মেলন ও সম্মাননা এর সদস্য সচিব বাপ্পী মজুমদার জানান, সাধারণত পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের ৩/৪শ মৃৎশিল্পী ৪/৫ কোটি টাকার পণ্য তৈরী করত। কিন্ত এবার ৪/৫ লাখ টাকার পণ্যও তৈরী করেনি। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের কারনে মেলা, উৎসব ও আড়ম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
কারুশিল্প রফতানিকারক ক্যাফটস ভিলেজেস লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তরুণ কুমার পাল বলেন, দেশে ও বিদেশে উন্নত ধরনের মাটির জিনিসের চাহিদা রয়েছে, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও বাজার ধরা জরুরী। প্রশিক্ষণ পেলে এই খাতে কয়েক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়া সম্ভব, আয় হতে পারে শতাধিক কোটি টাকা।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, মেলা ও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে জড়িত লোক শিল্পীদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভাতা দিতে হবে। তা না হলে এই শিল্প হারিয়ে যাবে।
বরিশাল জেলা কালচারাল অফিসার হাসানুর রহমান মাকসুদ বলেন, কয়েকদিন আগে বিগত বছরের প্রণোদনা হিসেবে ২৩০ জন লোক শিল্পীকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। সেখানে ২ জন মৃৎশিল্পীকেও দেয়া হয়েছে। মৃৎশিল্পীরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সহস্রাধিক মানুষ এই পেশায় জড়িত থাকলেও সরকারী সহায়তা বা আধুনিক প্রশিক্ষণ তারা খুব কমই পেয়েছেন।