এ বছর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো বাংলাদেশের। ১৯৭১সালে ২৫শে মার্চ থেকে শুরু করেছিল গনহত্যা। নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। বাঙালি পেয়েছে এক নতুন দেশ, বাংলাদেশ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই ২৪ বছর পাকিস্তানী শাসকের রক্তচক্ষু, শাসন, শোষণ আর অত্যাচার সহ্য করেছে এই বাংলা ভূখণ্ডের মানুষ। এ বছর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো বাংলাদেশের। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। সেই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ। এই দুইটি উৎসব উদযাপন করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেক হারানোর বেদনার মধ্যেও আমরা পেয়েছি একটি দেশ, বাংলাদেশ। এই আমাদের স্বস্তি।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীকালে আমরা বড় রকমের কোন আয়োজন করতে না পারলেও, স্বল্প পরিসরে হলে উদযাপন করা হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিব জন্ম শতবর্ষ। বাংলাদেশের আমন্ত্রণে উৎসবে যোগ দিতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান অথবা প্রতিনিধিগণ এসেছেন। এসেছেন নিকটতম প্রতিবেশী দেশ এবং ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে সর্ব প্রকার সাহায্য নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানো দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। না। আমরা শান্তিতে আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে পারিনি। কেন আমরা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে আমরা পালন করেছি আমাদের স্বাধীনতা অর্ধ শত বছর এবং মুজিব শতবর্ষ? ২৫শে মার্চ যখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় কষ্টের দিন এবং গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে আমাদেরকে হত্যা করতে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট নামে এক অপারেশন চালায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। নিরস্ত্র সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্র-শিক্ষক- সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা। এই রাতেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। গ্রেফতার হবার কিছুক্ষণ আগে রাত ১২টার পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু। সেই ২৫শে মার্চ ২০২১- পঞ্চাশ বছর পরে আবার জ্বলে উঠলো বাংলাদেশের কয়েকটি স্থান! ভূমি অফিস পুড়েছে। চট্রগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, থানায় হামলা হয়েছে, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অথিতি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদী করে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সংঘাত করেছে হেফাজতে ইসলাম সহ বেশ কয়েকটি বামপন্থী সংগঠন। মোদী বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশের প্রস্তুতি সমন্ধে বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে পিকেটার কর্মী বাহিনীকে নাশকতা করতে উতসাহিত করেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ৩দিন ব্যাপী প্রতিবাদী বিক্ষোভের নামে ববচেয়ে বেশী নাশকতা সংঘটিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এই অঞ্চলের ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে ১৫০-২০০ বছরের নথিপত্র। আলাউডদিন খা সঙ্গীতাঙ্গন পুড়িয়ে ছাইভস্ম করে দিয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটি একটি ধর্মীয় সংগঠন মাত্র। এদেশ বাঙালির, বাংলাদেশীর দেশ। যারা নিজেদেরকে এদেশের বলে দাবী করে, বাংলা ভাষায় কথা বলে, বাংলা খাবার খায়, তারা এদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিন উদযাপন করে না কেন? কিভাবে তারা বিক্ষোভের নামে রাস্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস এবং জনপদ রক্তাক্ত করতে পারে? বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপনের চেয়ে মোদী বিরোধী বিক্ষোভ কেন এত জরুরী ছিল?
নাশকতাপূর্ণ বিক্ষোভ করার মধ্য দিয়ে দেশের সম্পদ পুড়িয়ে এবং দেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে সবচেয়ে বেশী লাভ কার হলো?