স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে হেফাজতে ইসলামের দেশব্যাপী ‘মহাতাণ্ডবের’ নিন্দা এবং ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বুধবার এক বিবৃতিতে কমিটির পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের সব ধরনের সভা সমাবেশ বদ্ধ করা এবং হেফাজত-জামায়াতের মতো ‘স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন’ নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ২৬, ২৭ ও ২৮শে মার্চ এই তিন দিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ সহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। তিন দিনের বিক্ষোভ সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পূর্বাহ্নে ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব উদযাপন বানচাল করার জন্য সারাদেশে একের পর ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিশেষভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তারা যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে গত শতাব্দীর কিংবদন্তীতুল্য সঙ্গীতগুরু ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসমূহ ধ্বংস করেছে এবং যে পৈশাচিকতায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে তা আমাদের একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, আল কায়েদা ও আইএস-এর নৃশংস বর্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সুনামগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরও একইভাবে হামলা ও উপাসনালয় ধ্বংস করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেফাজতের তাণ্ডবে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততার কথা গণমাধ্যমে বলা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, যা হেফাজতিদের অধিকতর নৃশংসতায় প্ররোচিত করেছে।’
সংবাদপত্রে আসা খবরের বরাত দিয়ে নির্মূল কমিটি বলেছে, ‘গত ৫ দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ২৫টি মামলায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হলেও হেফাজতের মাত্র ৩৮ জন স্থানীয় নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বাকিদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বহুবার বলেছি, একাত্তরে যারা ধর্মের নামে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদেরই রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরাধিকারী হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম, যারা ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে মোল্লা ওমরের তালেবানি আফগানিস্তান বানাতে চায়।’
বিবৃতিদাতারা হলেন- বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব.), মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, চলচ্চিত্রনির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ।
অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, কাজী মানছুরুল হক খসরু, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, অধ্যাপক সুজিত সরকারও সই করেছেন বিবৃতিতে।
এছাড়া বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সমাজকর্মী শরিফুল হাসান সুমন।