বরিশালের মুলাদী উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের মেয়ে রোজিনা বেগম । সাত বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার একটি পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। অভাবী পরিবারের সন্তান তিনি, ফলে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। খুব অল্পবয়সে তার বাবা-মা একজন অটোচালকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন। সংসারে যুক্ত হয় আরও দুজন সন্তান- একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। ভালই চলছিল তার সংসার জীবন। হঠাৎ স্বামী সুমন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দুই সন্তানকে নিয়ে অকুল সাগরে ভাসতে থাকেন। সিন্ধান্ত নিলেন, তিনি ঢাকায় রিক্সা চালাবেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পরোয়া না করে তিনি রিক্সা চালানো শিখলেন এবং গ্রেজ থেকে দৈনিক ২০০শত টাকায় রিক্সা ভাড়ায় নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রিক্সা চালানো শুরু করলেন। কিন্তু রিক্সা চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করা বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। রোজিনা বেগমের ছোট ভাই আফান বাস করেন পটুয়াখালির মির্জাগঞ্জে। ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসেন মিরজাগঞ্জে। এখানে এসেও শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি একপায়ে রিক্সা চালাতে শুরু করেন। রিক্সা চালিয়ে যা আয় রোজগার করেন তা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোজিনা পেয়েছেন সম্মাননা ক্রেস্ট ও মাত্র পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা। হয়তো তার দিকে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এবং আগামীতে দেবেন। এরকম হাজারে হাজার রোজিনা বেগম আমাদের সমাজে রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সকল বাধা অতিক্রম করে সাহস নিয়ে চ্যালেজিং পেশায় আসেন, আবার কেউ কেউ সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও লোকলজ্জার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী রোজিনা বেগম একটি আইকন। ইচ্ছে থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে বীরের মতো বাঁচার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরজীবী হয়ে বেঁচো না, বরং সৎ কর্মের মধ্য দিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যাও- এক পা নিয়ে রিক্সা চালানো রোজিনার সংগ্রাম আমাদের সেই শিক্ষাটাই দিচ্ছে। রোজিনা বেগমের কর্মে উৎসাহিত হোক পরজীবী নারীরা। একটি রিক্সা, কয়েক হাজার টাকা অনুদান কিংবা একটি ঘরই নয়, বরং রোজিনা বেগম জয়িতা পুরষ্কার পাওয়ার অধিকার রাখে। জীবন সংগ্রামে রোজিনা জয়ী। কেননা কর্মে তার একনিষ্ঠতা, উদ্যম ও সাহস শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ সুস্থ সবল মানুষকে কর্ম করতে প্রেরণা যোগায়।