আজ রবিবার হেফাজতে ইসলামের ডাকে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়েছে। সমগ্র দেশ জুড়ে হরতালের প্রভাব না পড়লেও দেশের অনেক স্থানে সরকার সমর্থকদের সহিংস হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
ভোর থেকেই হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে দেশের একাধিক স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবশ করে। সমাবেশ শেষে জেলার বিভিন্ন স্থানে বেলা বারোটার দিকে লাঠি হাতে নিয়ে হরতাল সমর্থকেরা পিকেটিং শুরু করে। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ সহ কিছু কিছু স্থানে যান চলাচল ব্যহত হয়। সারাদেশে মহাসড়কে চলমান বেশ কিছু যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা।
এক নজরে আজকের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া:
হরতালের সমর্থকেরা জেলা শহরটির বিভিন্ন পয়েন্টে বিছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেত হয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকারী বক্তারা, গত শনিবার বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের সঙ্গে নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর হামলার বিচার দাবী করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার ও সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে হরতাল সমর্থককারীরা। । আজ দুপুরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র স্মৃতিধারক প্রতিষ্ঠান ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ এ হরতাল সমর্থনকারী হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা পুরো সঙ্গীতাঙ্গনে ভাঙচুর চালায়। একটি জাদুঘর, তিনটি ক্লাসরুম, সরোদ মঞ্চ, প্রশাসনিক কক্ষ ও স্টোররুমে থাকা বাদ্যযন্ত্র, চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশীল মোড়ে ৫৬ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’। ১২জানুয়ারী ২০১৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা এই সঙ্গীতাঙ্গনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী রেল ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ পৈরতলা এলাকায় পৌঁছুলে হামলা ও ভাঙচুর করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকরা। হামলাকারীরা ট্রেনটির চারটি বগিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং জানালার কাঁচে ঢিল ছুঁড়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করে। তবে যাত্রীদের আহত সংবাদ পাওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ব্যবসায়ীরা দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া মহাসড়ক স্থানীয় ও দুরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা।
ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের কমপক্ষে প্রায় অর্ধ শতাধিক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে ও টায়ার আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে সড়কে অবরোধ করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পীরবাড়ি এলাকায় পুলিশ লাইনে এবং খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা। সেখানে অনেক বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালায়। হাইওয়ে থানায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই জন মারা গেছে। এছাড়াও পীরবাড়ি এলাকায় পুলিশ লাইনে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলার পর সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও একজন হাসপাতালে মারা গেছে।
উল্লেখ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ হয়। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে বিজিবি ও পুলিশের গুলিতে অন্তত চার জন নিহত ও ১৬ জন আহত হন।