পুরো পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কেবল একজন মানুষেরই এইচআইভি এইডস থেকে সেরে ওঠার নজির পাওয়া গেছে। টিমোথি রে ব্রাউন নামের এই মানুষটিকে বলা হয় “বার্লিন পেশেন্ট”। কী কারণে তিনি এইডসকে পরাজিত করতে পেরেছিলেন তা এতদিন রহস্যই ছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ ব্যাপারে আলোকপাত করা সম্ভব হয়েছে। কীভাবে মানুষটি পরাজিত করেছিলেন এইডসকে?
বানরের ওপরে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, যে ব্যক্তি ব্রাউনের জন্য বোন ম্যারো দান করেছিলেন তার এক বিশেষ জেনেটিক মিউটেশন থাকার কারণে এইডস থেকে সেরে উঠতে পেরেছিলেন তিনি। জার্মানিতে লিউকেমিয়ার চিকিৎসা করার সময়ে প্রথমে ক্যান্সার সেল এবং তা সৃষ্টিকারী বোন ম্যারোর স্টেম সেল ধ্বংস করার জন্য রেডিয়েশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। এরপর তিনি একজন সুস্থ ডোনারের থেকে বোন ম্যারো গ্রহণ করেন যাতে নতুন রক্তকোষ তৈরি হতে পারে তার শরীরে। এই চিকিৎসার পর তার লিউকেমিয়া সেরে যায় এবং এর পাশাপাশি এইচআইভি লেভেল চলে যায় উপেক্ষণীয় পর্যায়ে। সাধারণত এইচআইভি রোগীদের নিয়মিত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, কিন্তু ব্রাউনের ক্ষেত্রে সেটা আর দরকার হয়নি। ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তার শরীরে এইচআইভির মাত্রা আর বৃদ্ধি পায়নি।
এইচআইভি এইডসের প্রতি মানুষের ভীতির মূল কারণ হলো এর কোনো কার্যকরী প্রতিকার নেই। তাহলে ব্রাউন কী করে এতদিন যাবৎ এইডসমুক্ত জীবন যাপন করছেন? এর পেছনে থাকতে পারে তিনটি সম্ভাবনা।
– ব্রাউন যে ডোনারের কাছ থেকে বোন ম্যারো গ্রহণ করেছিলেন তার শরীরে ছিলো একটি দুর্লভ জেনেটিক মিউটেশন, যা মানুষের CD4-T কোষগুলোকে পরিবর্তন করে। এসব কোষ হলো এইচআইভি এর মূল লক্ষ্য এবং এই পরিবর্তনের ফলে এরা আর এইচএইভি আক্রান্ত হয় না।
– এমনটা হতে পারে যে রেডিয়েশনের ফলে ব্রাউনের শরীরের সমস্ত এইচআইভি কোষ ধ্বংস হয়ে যায়।
– এমনটাও হতে পারে যে ডোনারের শরীর থেকে আসা নতুন ইমিউন কোষগুলো ব্রাউনের শরীরের পুরনো সব কোষকে প্রতিস্থাপিত করে। রেডিয়েশনের পরেও যেসব এইচআইভি কোষ বেঁচে থাকে তারাও মারা পড়তে পারে এই পদ্ধতিতে। একে বলা হয় গ্রাফট-ভার্সা-হোস্ট।
কিন্তু ঠিক কোন কারণটি আসলে কাজ করেছিলো? তা জানতে আটলান্টার এমোরি ইউনিভার্সিটির ডক্টর গুইডো সিলভেস্ট্রি তিনটি বানরকে ঠিক সেই চিকিৎসা দেন যা ব্রাউনকে দেওয়া হয়েছিলো। এসব বানরকে আক্রান্ত করা হয় SHIV(Simian-Human Immunodeficiency Virus) দিয়ে যা মানুষের এইচআইভির মতই বানরের মাঝে এইডসের উপসর্গ তৈরি করে। তাদেরকে কিছুদিনের জন্য অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়। তাদেরকে আক্রান্ত করার আগে তাদের নিজেদের বোন ম্যারো সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিলো, যা আক্রান্ত হবার পর এ পর্যায়ে তাদের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
দেখা যায়, রেডিয়েশন দেওয়ার ফলে এদের শরীরের প্রায় ৯৯ শতাংশ এইচআইভি কোষ মারা যায় এবং বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের ফলে তৈরি হয় নতুন সুস্থ কোষ। কিন্তু এই চিকিৎসার পর অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ বন্ধ করে দেবার পর তাদের মাঝে আবার ফিরে আসে এইচআইভি এবং একটি বানর কিডনি ফেইলিউরের কারণে মারাও যায়। এ থেকে বোঝা যায়, রেডিয়েশন অনেক কোষ মেরে ফেলতে সক্ষম হলেও সম্পূর্ণভাবে এইচআইভি সারিয়ে তুলতে পারে না। তাহলে বার্লিন পেশেন্টের ক্ষেত্রে কি কাজ করেছিলো? সম্ভবত বোন ম্যারো ডোনারের জেনেটিক মিউটেশন অথবা গ্রাফট-ভার্সা-হোস্ট এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বার্লিন পেশেন্টের মতো উপকারিতা পাওয়ার জন্য একই রকম চিকিৎসা দেওয়া হয় আরও দুইজন এইচআইভি রোগীকে যাদের ছিলো লিম্ফোমা- লম্ফ গ্রন্থির ক্যান্সার। কিন্তু তাদের বোন ম্যারো ডোনারদের ওইরকম জেনেটিক মিউটেশন না থাকার কারণে তারা এইচআইভি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারেননি। চিকিৎসা শেষ হবার মাস দুয়েকের মাঝে এইচআইভি ফিরে আসে এবং তাদের আবার অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ গ্রহণ শুরু করতে হয়।
(মূল: Live Science)
অবশেষে এইচআইভি এইডস থেকে সেরে ওঠার রহস্য আবিষ্কৃত
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
সাময়িকীর অতিথি লেখক একাউন্ট। ইমেইল মাধ্যমে প্রাপ্ত লেখাসমূহ অতিথি লেখক একাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়।
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন