যুদ্ধের ময়দানে বর্মের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে গা বাঁচাতে অনেক প্রাচীন সময় থেকেই বিভিন্ন উপাদানে বর্ম তৈরি করা হতো। যুদ্ধ আছে এখনো, কিন্তু ভারি ধাতব বর্মের দিন বুঝি শেষ হয়ে এলো, কারণ এখন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে আসছে মাকড়শার জালের তৈরি বর্ম!
প্রাকৃতিক বিভিন্ন তন্তুর মাঝে অন্যতম শক্ত তন্তু হলো মাকড়শার জাল। হালকা এবং নমনীয় এই তন্তু অজনের হিসেবে ইস্পাতের চাইতে শক্ত! চিন্তা করুন, উড়ে যাওয়া একটি পোকার গতি থামিয়ে দিতে পারে মাকড়শার জাল। এটা প্রাকৃতিকভাবে লম্বা হতে থাকে আর শুষে নেয় আটকা পড়া পোকার শক্তি। বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করলে অনেক বড় এমন একটি জাল হয়তো একদিন থামিয়ে দিতে পারবে ধ্বংসাত্মক মিসাইল!
শুধু বর্মই নয়, অস্ত্রোপচারের সুতোর মতো বস্তু বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হতে পারে এ দিয়ে। মিশিগানের ক্রেইগ বায়োক্র্যাফট ল্যাবরেটরিতে জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জন্ম দেওয়া হয়েছে এমন সব রেশম পোকা যারা কিনা তৈরি করবে মাকড়শার তন্তু। আর এই তন্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এমন সব দস্তানা যাদের দৃঢ়তা কিনা শীঘ্রই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে।
এই আইডিয়া নিয়ে যে আগে কাজ করা হয়নি তা নয়। কিন্তু মাকড়শার তন্তু থেকে বর্ম তৈরির কাজটি নেহায়েত ছেলেখেলা নয় আর অনেক প্রতিষ্ঠান এতে ব্যর্থ হয়ে ইতোমধ্যেই রণে ভঙ্গ দিয়েছে। কিন্তু ক্রেইগ বায়োক্র্যাফট রেশম পোকা ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারে সাফল্য। কারণ জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এসব রেশম পোকা তাদের সন্তান-সন্ততির মাঝেও এমন তন্তু উতপাদনের ক্ষমতা রেখে যাবে ফলে সম্ভব হবে বাণিজ্যিকভাবে এই তন্তুর উৎপাদন।
২০১১ সালে এই ধরণের রেশম পোকার ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রথমে গবেষকেরা মাকড়শার থেকে একটা ডিএনএ সিকোয়েন্স সংগ্রহ করেন যার মাঝে তন্তু তৈরির প্রোটিনটি থাকে। এর পরে এই প্রোটিনের মাঝে এমন একটি “অন” এবং “অফ” সুইচের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, যাতে রেশম পোকা একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানর পরেই তা এমন তন্তু উৎপাদন করে।
ধারণা করা হচ্ছে বাণিজ্যিক পর্যায়ে যাবার পর এই তন্তুর প্রতি কেজি উৎপাদনের জন্য খরচ পড়বে ১৫০ ডলার বা তারো কম। প্রথমে এই তন্তু দিয়ে তৈরি মজবুত রেশমি কাপড় বাজারে ছাড়া হতে পারে এবং আশা করা হচ্ছে তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। ঠিক কখন এই তন্তু দিয়ে সেনাবাহিনীর জন্য বর্ম জাতীয় পোশাক তৈরি করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অবশ্যই এই তন্তু ব্যবহার করে আঘাত প্রতিরোধের ওপরে আরও পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হবে।