উনিশ’শ একাত্তর সালে নয় মাস ভারতে বসে পরিচালিত হয়েছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। ভারত সরকারের আশ্রয় এবং সহযোগিতায় গঠিত হয়েছিল এই সরকার।
সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজনৈতিক, সামরিক এবং কূটনীতিক বিষয়গুলো পরিচালনা করা হয়েছিল।
যুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস অস্থায়ী সরকার নানা ধরণের অস্থিরতা এবং টালমাটাল অবস্থা মোকাবেলা করেছে।
ভারত সরকারের সাথে সমন্বয়, নিজেদের মধ্যে বিভেদ সামাল দেয়া এবং আন্তর্জাতিক জনমত গঠন – এসব কিছু একসাথে করতে হয়েছে অস্থায়ী সরকারকে।
কিভাবে এই সরকার গঠিত এবং পরিচালিত হলো? এর আড়ালে কী ঘটেছিল? এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এ লেখায়।
তাজউদ্দীনের ভারত যাত্রা
উনিশ’শ একাত্তর সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের সময় সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। পরে তাদের বেশিরভাগই ভারতে আশ্রয় নেয়।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে একটি লেখার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের স্মৃতিচারণ করেন।
মি. মকসুদ লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর একটি কার্গো বিমানে চেপে কলকাতা থেকে দিল্লী যান।
সেখানে ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তাজউদ্দীন আহমদের বৈঠক হয়।
মি. মকসুদের ভাষ্য মতে, ২৫ মার্চ ঢাকায় ক্র্যাক-ডাউনের পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সেটাই ছিল ভারতের প্রথম যোগাযোগ।
“তিনি (তাজউদ্দীন আহমদ) ইন্দিরা গান্ধীকে বলেন স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা চান,” লিখেছেন মি. মকসুদ।
ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সে বৈঠকে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন ও শপথ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেন তাজউদ্দীন আহমদ।
তাজউদ্দীনের আশংকা
ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের সময় তাজউদ্দীন আহমদ নিজেকে কীভাবে পরিচয় দেবেন সেটি নিয়ে তার মনে সংশয় তৈরি হয়েছিল।
তাজউদ্দীনের মনে আশংকা তৈরি হয়েছিল, তিনি যদি নেতৃত্ব নেন তাহলে আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতারা বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করবেন না এবং তাদের মনে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে।
দিল্লীতে তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামে সাথে দেখা হয় অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের।
ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক রেহমান সোবহান পরামর্শ দেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন আহমদকেই নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে।
নিজের আত্মজীবনীতে অধ্যাপক রেহমান সোবহান লিখেছেন, ” আমি এবং আমীর তাজউদ্দীনকে বুঝাই যে এখন নিজের সম্পর্কে কোন ধরণের সংশয় রাখা চলবে না। …. তাকে সতর্ক করে দিই যে মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে তার যোগ্যতা এবং কর্তৃত্বের কথা হাকসারকে (ইন্দিরা গান্ধীর মুখ্য সচিব) আমি জানিয়েছি। সুতরাং আমাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না যা তার বিষয়ে ভারতের মনে কোন সংশয় না থাকে।”
অস্থায়ী সরকার গঠন
ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠক শেষ করে দিল্লী থেকে কলকাতায় ফেরেন তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম।
সেখানে যুব নেতাদের সাথে তাদের এক বৈঠক হয়। এদের মধ্যে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি।
তাজউদ্দীন আহমদের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং ‘মূলধারা ‘৭১’ বই-এর লেখক মইদুল হাসান, তার বইতে লিখেছেন, বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে কোন প্রশ্ন তোলেননি।
সে অনুষ্ঠানে অস্থায়ী সরকার গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম।
কারো কারো আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়।
এ সরকারের মূল ব্যক্তিরা ছিলেন
শেখ মুজিবুর রহমান – রাষ্ট্রপতি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম – উপ-রাষ্ট্রপতি
তাজউদ্দীন আহমদ – প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম,সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন
খন্দকার মোশতাক আহমদ – পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
এম মনসুর আলী – অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
এএইচএম কামরুজ্জামান – স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়
বৈদ্যনাথতলার শপথ অনুষ্ঠান
অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল।
শপথ গ্রহণের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয় ভারত সীমান্তের কাছে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার একটি আমবাগান।
এই জায়গাটির নাম পরবর্তীতে করা হয়েছে মুজিবনগর।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী, যিনি ২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানী উপদেষ্টা ছিলেন। উনিশ’শএকাত্তর সালের শুরুর দিকে মি. এলাহি ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক। পঁচিশে মার্চ গণহত্যা শুরু হবার পরে তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন।
দু’হাজার উনিশ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. এলাহি বলেন, পুরো আয়োজন করা হয়েছিল খুবই গোপনে।
“এমন একটি জায়গা বাছাই করতে বলা হয়েছিলো যেখানে ভারত থেকে সহজেই ঢোকা যায়, যে এলাকা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে – বিশেষ করে আকাশ থেকে,” বলেন মি. এলাহি।
তাঁর বর্ণনা মতে, “লেফটেন্যান্ট কর্নেল চক্রবর্তী নামে বিএসএফের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৈদ্যনাথতলার আমবাগানটি বাছাই করা হলো। সেখানে আমবাগান থাকায় আকাশ থেকে সহজে দেখা যায় না। মেহেরপুর থেকে ১০/১২ কিলোমিটার দূরত্বে হলেও রাস্তাঘাট নষ্ট থাকায় সহজে যাওয়া যায় না। আবার ভারত থেকে সহজেই সেখানে প্রবেশ করা যায়।”
বেশ কিছু বিদেশী সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন সে অনুষ্ঠানে।
বৈদ্যনাথতলায় একটি মঞ্চ বানানো হয়েছে। মঞ্চে থাকা চেয়ারগুলোর মধ্যে একটি খালি রাখা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য।
সেখানে ‘ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ পাঠ করলেন গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী। তিনিই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
শপথ গ্রহণের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বক্তৃতা করেন।
নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ তার ভাষণে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ”আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্যে যে, তারা আমাদের আমন্ত্রণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি দেখে যাওয়ার জন্য বহু কষ্ট করে, বহু দূর দূরান্ত থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন।”
কলকাতায় প্রথম কূটনৈতিক অফিস
কলকাতায় পাকিস্তানের উপ-দূতাবাসে উপ-হাইকমিশনার পদে ছিলেন বাঙালি অফিসার হোসেন আলী।
প্রবাসী সরকার গঠনের পরপরই হোসেন আলীর নেতৃত্বে উপ-দূতাবাসে কর্মরত প্রায় ৫০ জন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
পাকিস্তানের উপ-দূতাবাসকে স্বাধীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে রূপান্তরিত করেন। কলকাতার সেই কূটনৈতিক অফিসটি ছিল বিদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অফিস।
এই ঘটনা পাকিস্তান সরকারকে একই সাথে বিব্রত এবং ক্ষুব্ধ করে। এটা ছিল তাদের জন্য বড় এক ধাক্কা। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন বেশ বিচলিত হয়ে উঠেন।
বাংলাদেশের সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর একটি লেখা থেকে জানা যায়, কলকাতায় উপ-দূতাবাসে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওঠান হোসেন আলী।
ক্ষুব্ধ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় চিঠি পাঠায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। পাকিস্তান দাবি জানায়, কলকাতায় উপ-দূতাবাসে যেসব বাঙালি কর্মকর্তা বিদ্রোহ করেছে তাদের যেন ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়।
কিন্তু তাদের বহিষ্কার করতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত।
চিঠিতে পাকিস্তানের তরফ থেকে বলা হয়, কলকাতায় উপ-দূতাবাসে পাকিস্তান নতুন একজন উপ-হাইকমিশনার নিয়োগ করেছে।
যেসব ব্যক্তি কলকাতার উপ-হাইকমিশন ‘অবৈধভাবে দখল’ করে আছে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ কারার দাবি জানানো হয় পাকিস্তানের তরফ থেকে।
কিন্তু ভারত সেটি করেনি।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে জানানো হয়, পূর্ব পাকিস্তানের যারা বিদ্রোহ করেছে তাদের উচ্ছেদ করা হবে না।
তবে পাকিস্তানের নিয়োগ করা নতুন উপ-হাইকমিশনার এবং অফিসের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে ভারত।
ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া কলকাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন খোলা সম্ভব হতো না।
ভারতের কাছ থেকে পূর্ণ নিরাপত্তা এবং সহযোগিতার আশ্বাস পাবার পরেই এই কূটনৈতিক মিশন খোলা হয়।
অস্থায়ী সরকারের ভেতরে অস্থিরতা
যুদ্ধ চলাকালে অস্থায়ী সরকারকে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
একদিকে সরকারের ভেতরে নানা উপদল ও মতপার্থক্য তৈরি হয়। এসময় ভারত সরকারের সাথে সমন্বয়, আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং নিজেদের ভেতরে ঐক্য ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে অস্থায়ী সরকারকে।
যুদ্ধের সময় বামপন্থীদের (ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি) কর্মীদের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়।
যুদ্ধের কয়েকমাস পরেই অস্থায়ী সরকারের ভেতরে নানা মতপার্থক্য তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের একটি অংশ অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদকে সরিয়ে দেবার জন্য নান তৎপরতা চালাতে থাকে।
ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। মুজিব বাহিনীর উপর অস্থায়ী সরকারের কোন প্রভাব ছিল না।
ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের প্রশ্নে মুজিব বাহিনীর তরফ থেকে তীব্র আপত্তি আসে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দিল্লীর সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তার নির্দেশনায় মঈদুল হাসান যোগাযোগ করেন ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত ডি.পি ধরের সাথে।
সে বৈঠকে ডি.পি ধর মত দেন যে ন্যাপ-সিপিবি কর্মীদের মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
তবে মি. ধর শর্ত দেন, এ বিষয়ে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের তরফ থেকে তাকে যেন জানানো হয়।
ডি.পি ধরের সাথে বৈঠক সম্পর্কে ‘মূলধারা’৭১’ বইতে মঈদুল হাসান লিখেছেন, ” ডি.পি জানতে চান বামপন্থী কর্মীদের কত সংখ্যায় যোগ দেবে এবং সেটা কত দ্রুত করা সম্ভব হবে? … আমি বলেছি সবর্মোট ২০ থেকে ২৫ হাজার হতে পারে এবং প্রতি সপ্তাহে ৫০০০ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে”
পশ্চিমা বিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতা
কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশ সরকার শুরুতেই বুঝতে পেরেছিল যুদ্ধের পাশাপাশি যে কাজটি করা দরকার সেটি হচ্ছে কূটনীতিক তৎপরতা বাড়ানো।
বাঙালিরা কেন যুদ্ধ করছে সেটি বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানো অপরিহার্য ছিল।
অস্থায়ী সরকার শপথ নেবার আগেই বাংলাদেশের জন্য কাজ শুরু করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
অর্থনীতিবিদ মি. সোবহান তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, যেসব দেশ এবং সংস্থা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্যে দেয় তারা যাতে সেটি বন্ধ করে সেজন্য লন্ডন এবং ওয়াশিংটনে গিয়ে কাজ করতে তাকে নিয়োগ করেন তাজউদ্দীন আহমদ।
তৎকালীন পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।
উনিশ’শএকাত্তর সালের মার্চ মাসে একটি মানবাধিকার সম্মেলনে যোগ দিতে মি. চৌধুরী গিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
তিনি সেখানে অবস্থানকালে পাকিস্তান বাহিনী ২৫শে মার্চ-এ তাদের অপারেশন শুরু করলে মি. চৌধুরী চলে যান লন্ডনে। সেখানে গিয়ে তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন এবং একাজে তিনি সফল হয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ ২০১৫ সালে ১২ মার্চ ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় ‘লন্ডন’৭১: মুক্তিযুদ্ধের কূটনৈতিক ফ্রন্ট’ শিরোনামে একটি স্মৃতিচারণা করেছেন।
মি. আহমদ লিখেছেন “লন্ডন তথা সারা ইউরোপে বাংলাদেশের প্রথম কূটনৈতিক ফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হলো, যখন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ২৭শে অগাস্ট লন্ডনের নটিংহিল গেটের ২৪ নম্বর পেমব্রিজ গার্ডেনে আমাদের কূটনৈতিক মিশন উদ্ধোধন করেন।……. ব্রিটিশ সরকার আমাদের এই মিশনকে স্বীকৃতি দেয়নি; তাতে কী, আমরা দমে থাকিনি। লন্ডনে আমাদের প্রথম সেই মিশনটি এখন বাংলাদেশ সেন্টার।”
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী যখন লন্ডনে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছিলেন তখন তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন পাকিস্তানী গোয়েন্দারা।
‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’ বইতে মি. চৌধুরী লিখেছেন, ব্রিটিশ গোয়েন্দারা তাকে সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
প্রবাসী সরকার: দেশে ফেরা
উনিশ’শ একাত্তর সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের পরে দেশে আসেন অস্থায়ী সরকারের সদস্যরা।
কিন্তু অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি।
উনিশ’শ বায়াত্তর সালের ৭ই জানুয়ারি মধ্যরাতের পর শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তি দেবার পর পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডন পৌঁছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
লন্ডনে একদিন অবস্থানের পরে ১০ জানুয়ারি দিল্লী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান।
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!