পঙ্কজ রায়, সাময়িকী.কম
একটি জাতির অমূল্য সম্পদ ও উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে দেশটির যুব সমাজ। একটি শক্তিশালী ও উন্নত দেশ গড়তে যদি প্রয়োজন হয় একটি শিক্ষিত, সুসংগঠিত কর্মঠ যুব সমাজ তাহলে আমাদের শিক্ষিত যুব সমাজকে বয়সের বাক্সে বন্দী রেখে কর্মহীন করে অন্ধকারময় গুহায় আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে কেন! সব কিছুরই উন্নয়ন হচ্ছে সমান তালে যা সমালোচনাকারীরাও গোপনে বউয়ের কানে কানে স্বীকার করে।গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হলো, যুবনীতি অনুযায়ী ১৮-৩৫ বয়সীরা যুব,চাকরি থেকে অবসরের বয়স বৃদ্ধি পেল, বেতন বৃদ্ধিতে দেশ আমার ইতিহাস গড়ল অথচ হাজার দাবির পরেও চাকরিতে আবেদনের বয়স রহস্যজনকভাবে থাকল সেই ৩০ বছরে সীমাবদ্ধ।বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে কেউ কি বলতে পারবে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩০ বছর যৌত্তিক! এদিকে বেসরকারি নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠান গুলোও সরকারি নীতি অনুসরণ করছে।এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষিত যুব সমাজ যাবে কোথায়? প্রশ্ন আসতে পারে, ৩০ বছরেই মেধাবীরা ঠিক জায়গা করে নেয়। হ্যা নেয়, তাদের সংখ্যা কত? হবে হাতে গোনা শীর্ষ সারির ক’জন মেধাবী। আর যারা বয়সের কারনে এই সংক্ষিপ্ত সময়ে কাঙ্খিত চাকরিটিতে প্রবেশ করতে পারল না তারা কি মেধাহীন! তবে রাষ্ট্র কি তাদের সর্ব্বোচ সনদগুলো মেধার পরিচয় না নিয়েই দিলো! আজ লাক্ষো যুবকের চিৎকার ‘চাকরি নয়, মেধা প্রমাণের সুযোগ চাই’। সুযোগ দিতে বাঁধা কোথায়? ত্রিশোর্ধ্বরা কি আসলেই কর্মক্ষমতাহীন। অনেকে নাকি বলে বয়স বাড়ালে বেকারত্ব বাড়বে।আজব যুক্তিরে ভাই।ক’জন যুবক নিজে উদ্যোক্তা হতে পারবে,বলেন?যারা বয়স বাড়ানোকে ভালো দৃষ্টিতে নিতে চাচ্ছন না তাঁরা কি উদ্যোক্তা হতে বেকারদের মূলধন দেবে! তাছাড়া মা-বাবার ঘাম ঝরা শ্রমের অর্থে একজন শিক্ষার্থীর ২৭-২৮ বছরে অর্জিত সনদগুলো চাকরির ক্ষেত্রে ২ বছরেই হচ্ছে মূল্যহীন। বিষয়টা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সত্যিই কষ্টদায়ক বলে মনে করি।
যেখানে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্পিকার থাকাকালীন ২০১২সালে ৩১জানুয়ারি মহান জাতীয় সংসদে বলেছিলেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় ৩০-এর পরিবর্তে ৩৫ করা উচিত। তাছাড়া দেশের শীর্ষ সারির শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অসংখ্য সাংসদ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সহ অনেক গুণীজন শিক্ষিত তরুণদের এই দাবির ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে রাজপথ, পত্রিকা, টিভি সহ নানা মাধ্যমে নির্দিষ্ট যুক্তি দেখিয়ে কথা বলছেন।তারপরও বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে তাঁদের মতামত, যুব সমাজের সেই কাঙ্খিত দাবিটি আজও পূরণ হয়নি।তবুও যুবকরা বয়স বৃদ্ধির আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে নেই এ ব্যাপারে।তারাও বাস্তব রুপগুলো তুলে ধরে নিয়মিত লিখছেন চিঠি-কলাম।এই আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে দিন-রাত প্রচার প্রচারনাতো চলছেই শিক্ষার্থীদের অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ পেজে।আন্দোলনকারীরাও ছুটেই চলছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দপ্তর,কর্তাব্যক্তি সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।যদিও চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবি দেশের অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক আগে করে আসছেন।
তবে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সাধারন ছাত্রপরিষদ নামের একটি সংগঠন এই যুগোপযোগী দাবির পক্ষে জোড়ালো ভূমিকা রাখছে এবং আজ পর্যন্ত দাবিটি নিয়ে রাজপথে পরে আছে। যদিও চুড়ান্ত ফলাফল এখনও শূন্য। কিন্তু এই সংগঠনটি এখন অনেককেই বোঝাতে সক্ষম যে, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি সময়ের সাথে যৌত্তিক, যুগোপযোগীও বটে।
উল্লেখ্য,গত ২৭ জানুয়ারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স নূন্যতম ৩৫ বছর করার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারন ছাত্র পরিষদের ব্যানারে দেশব্যাপী অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৬৪ জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।
একই দাবিতে সংগঠনটি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করে আসছে।
সর্বশেষ গত ২৩ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শান্তিপূর্ণ আমরন অনশন শুরু করলে ৫ম দিন (মঙ্গলবার) সন্ধায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রথমে ৭জন ও পরে (রাত ১১টার দিকে) তিন নারী সহ আরো ১৭জন আন্দোলনকারীকে শাহবাগ থানায় আটকে রাখা হয়। অবশ্য পুলিশ সেই অনশনকারীদের সারারাত মশার কামড় খাইয়ে ৭ মার্চ পর্যন্ত অনশন না করার শর্তে পরদিন দুপুরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। তবে পুলিশী হয়রানি এটি প্রথম নয়। অসংখ্য বার এরকম ঘটনার শিকার হতে হয়েছে এই দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। এখন প্রশ্ন থেকে যায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে, কেন এই পুলিশী বাঁধা! আর কেনইবা দাবির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এখনও নীরব?তাদের দাবি কি যুক্তিপূর্ণ নয়! কতিপয় কিছু ব্যক্তি এই দাবির বিরোধীতা করে থাকেন তবে তাদের সংখ্যা নগন্য। যারা এটি চান না তারা কি খবর রাখেন যে, ২৩ বছরের পড়ালেখা শেষ করতে কমপক্ষে ২৭-২৮ বছর লেগে যায়। তারা হয়তো জানেন না একজন কৃষক-শ্রমিকের সন্তানকে নানা বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে শিক্ষা জীবন শেষ করতে হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের পড়ার খরচ নিজেকেই চালাতে হয়।
যারা বুঝেও বুঝতে চাইছেন না বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশের থেকে এ বিষয়ে আমরা পিছিয়ে থাকলে দেড়শ বছর পিছিয়ে যাব, তারা কিন্তু কোনদিন ফরম ফিলাপের টাকা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাননি।তারা অনেকেই পড়েছেন প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও সেশনজট খুঁজে পাওয়ার কথা নয়। যারা বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার অজুহাতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধিকে সমস্যা মনে করে সরকারকে ভুল বোঝাচ্ছেন তারা কি সত্যি সত্যি বেকারত্ব হ্রাসে কর্ম সংস্থান বৃদ্ধির কথা বলছেন?মনে ভীষন সংশয়, আমাদের সরকারের জনপ্রিয়তাকে বিতর্কিত করতেই কৌশলে শিক্ষিত যুব সমাজের ন্যায্য দাবিগুলো এড়িয়ে যাবার অপচেষ্টা হচ্ছেনাতো! তা নাহলে লাক্ষো যুবকের এই ন্যায্য দাবি বার বার উপেক্ষিত হবারতো কথা নয়। অথচ স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন তরুণ-যুবরাই একদিন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে রাখবে অসামান্য আবদান।হায়! আজ সেই যুব সমাজ বয়সের বেড়াজালে বন্দী, কর্মহীনদের আর্তনাদ শোনার যেন কেউ নেই। তাই আজ আমিও লাক্ষো যুবকের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি, ”আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা বিদ্যানন্দিনী শেখ হাসিনা আছেন, শেষে যুব শক্তিরই জয় হবে নিশ্চয়।”