দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সৌজন্যে
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ |
- সাঈদুর রহমান রিমন
জঙ্গি হামলায় বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি ছিল অবৈধ। আবাসিক এলাকায় আবাসিক বাড়িতে এমন একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনার কোনোরকম অনুমতি ছিল না। রাজউক থেকেও সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা চালানোর অনুমতি নেওয়া হয়নি। এমনকি রেস্তোরাঁয় ব্যবহূত গ্যাস সংযোগটিও ছিল গৃহস্থালি সংযোগ। শুধু তাই নয়, ওই রেস্তোরাঁয় ছিল অবৈধ মদের বার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে ওই রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডার গ্যাস রাখা হলেও মূলত গৃহস্থালি গ্যাস সংযোগ দিয়েই বাণিজ্যিক রেস্তোরাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। সেখানে দেশি-বিদেশি সব ধরনের মাদক ছিল সহজলভ্য। মদের বারের ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো লাইসেন্স পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। গুলশান জোনে মাদকের সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই মদের বার চালানো হতো বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতালি ও জাপানি নাগরিকদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই গড়ে উঠেছিল হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি। খাবারের মেন্যুও সাজানো ছিল বিদেশি নাগরিকদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েই। প্রতি রাতেই সেখানে দুই শতাধিক বিদেশির খাওয়া-দাওয়া, আড্ডায় সরগরম থাকত। এত বিদেশি আনাগোনা থাকলেও লেক ঘেঁষে নির্জন স্থানে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁটির নিরাপত্তা নিয়ে মালিক পক্ষের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কখনো বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশোনার জন্য গুলশান থানা বা চ্যান্সেরি পুলিশকে জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান-বারিধারা ও বনানী। এর মধ্যে আবার গুলশান বারিধারায় রয়েছে কূটনৈতিক জোন। কিন্তু বহু বছর আগেই এসব এলাকা আবাসিক চরিত্র হারিয়েছে। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার পর ওই সব এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শত শত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সেখানকার অনুমোদনহীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের জরিপ সূত্রে জানা যায়, হলি আর্টিজানের মতো পুরো গুলশানে ৯০৪টি আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। আরেক অভিজাত এলাকা বনানীতে রয়েছে এ ধরনের ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠান। তবে গত আট বছরে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। গুলশান আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় একদিকে অস্বাভাবিক যানজট বেড়েছে, অন্যদিকে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রাস্তার শেষ প্রান্তে লেকের পাশে হলি আর্টিজান বেকারি নামের এই রেস্তোরাঁটি অবস্থিত। প্রাণোচ্ছল মানুষের আনাগোনায় সরব থাকত রেস্তোরাঁটি। গত ১ জুলাই জঙ্গি হামলা ও পরে কমান্ডো অপারেশন থান্ডারবোল্টে বিদেশিদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ওই রেস্তোরাঁটি এখন এক মৃত্যুপুরী। স্থানীয়রা জানান, ওভেন থেকে বের করা গরম রুটি আর বেকারির খাবারের জন্য সকালেই সেখানে হাজির হতেন অনেক বিদেশি নাগরিক। বিকালে সবুজ লনে চলত আড্ডা। পোষা প্রাণীদের প্রবেশাধিকার থাকায় অনেকেই শখের প্রাণীটিকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। সবুজ মাঠে খেলত শিশুরাও। সেখানে এখন ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ আর সাঁজোয়া যানের চাকার দাগ।