সাময়িকী.কম
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বন্ধ হয়ে যাওয়া তাসখন্দ-ঢাকা-তাসখন্দ রুটে উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজের ফ্লাইট পুনরায় চালু হবার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তাসখন্দে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান। সার্ভিস দেয়ার মতো উপযুক্ত জিএসএ তথা জেনারেল সেলস এজেন্ট পাওয়া গেলে বা সিলেক্ট করা গেলেই ঢাকার পথে আবার পরিচালিত হবে মধ্য এশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ বিমান সংস্থাটির নিয়মিত ফ্লাইট। তবে যে জটিলতার কারণে এর আগে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার সুরাহা হবার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি সাপেক্ষেই জিএসএ চূড়ান্ত হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
উজবেকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি নিয়ে ৪ এপ্রিল বুধবার এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান জানান, “ফ্লাইট পুনরায় চালুর ব্যাপারে দুই দেশের উৎসাহ আছে, মত বিনিময়ও হয়েছে। আশা করছি অচিরেই জিএসএ সংক্রান্ত সব জটিলতার অবসান হবে এবং এর ফলে ঢাকার যাত্রীরা যেমন তাসখন্দ হয়ে পশ্চিমে যাবে, তেমনি ইউরোপের হাজার হাজার যাত্রী তুলনামূলক কম খরচায় এবং স্বল্পতম সময়ের ট্রানজিটে বাংলাদেশে যাওয়া-আসা করতে পারবে। তাছাড়া ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে যারা এখানে ২-৩ দিন ব্রেক নিতে চাইবে, তারা খুব সহজেই তাসখন্দের পাশাপাশি সামারখান্দ এবং বুখারাতে দর্শনীয় স্থানগুলোর ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে”।
উজবেক তুলা নির্ভর দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বানিজ্যকে আরো ভিন্ন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাবার লক্ষ্যে কাজ করছে তাসখন্দের বাংলাদেশ দূতাবাস। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প তথা রেডিমেইড গার্মেন্টস (আরএমজি) সেক্টরের কাঁচামাল হিসেবে বছরে ৫ থেকে ৭শ’ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমপরিমাণ তুলা উজবেকিস্তান থেকে আমদানী করে থাকে বাংলাদেশ, যা বাইল্যাটেরাল টোটাল ট্রেডের প্রায় ৯০ শতাংশ। রাষ্ট্রদূত জানান, “শুধু তুলা আমদানীর মধ্যে ব্যবসা-বানিজ্য সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের দেশ থেকেও যাতে এখানে তৈরী পোশাক আসতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। এখানে বাজার যেহেতু বেশ বড় তাই ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর সম্ভাবনাও উজ্জ্বল”।
পেশাদার কূটনীতিক মসয়ূদ মান্নান বলেন, “বাংলাদেশের ঔষধশিল্পও ভালো বাজার করে নিতে পারে এতদঞ্চলে। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি ডেলিগেশন ইতিমধ্যে এখানে এসেছে। চেষ্টা চলছে এদের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারের পাশাপাশি উজবেকিস্তান সহ সেন্ট্রাল এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমাদের মেডিসিন বাজারজাত করার। পাশাপাশি এদেশ থেকে ড্রাইফুড বাংলাদেশে নেবারও চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানকার শুকনো ফল এবং রকমারী বাদাম বেশ বিখ্যাত, যা আমাদের দেশে খুবই দামী। সোভিয়েত আমল থেকেই উজবেকিস্তানের সুনাম রয়েছে উন্নত মানের এগ্রিকালচারাল কেমিক্যাল এবং সারের জন্য। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো যাতে বাংলাদেশে নেয়া যায় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষির উন্নয়ন আরো বেশি নিশ্চিত করতে”।
জাঁকজমকপূর্ণ সামারখান্দ মিউজিক ফেস্টিভালে গত বছর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিরসংগীত ও নৃত্য বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সাংস্কৃতিক দল অংশনিয়েছিল। এ বছর সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আরেকটি টিম সহসাই এখানে আসবে বলে জানানরাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান। উজবেকিস্তান ছাড়াও তিনি কাজাখস্থান, কিরগিজ রিপাবলিক এবং আফগানিস্তানেরও দায়িত্বে আছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, “কাজাখস্থানের সাথে যদিও এখনো তেমন কোন ব্যবসা-বানিজ্য আমাদের নেই, তবে রাশিয়ার সাথে হওয়া চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়ে গেলে তার যে জ্বালানী লাগবে তা পূরণে কাজাখস্থানের গুরুত্ব খুব বেড়ে যাবে আমাদের জন্য। আফগানিস্তানে বিভিন্ন প্রজেক্টে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশী সুনামের সাথে কর্মরত আছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।