এখনো ফেরার এবং ফেরানোর সময় ফুরিয়ে যায়নি

ফয়সাল কবির
ফয়সাল কবির - ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
5 মিনিটে পড়ুন

সাময়িকী.কম

mojar school01 0 এখনো ফেরার এবং ফেরানোর সময় ফুরিয়ে যায়নি

‘মানুষকে ঘৃণা করার অপরাধে পৃথিবীকে কাউকে হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ভালোবাসার অপরাধে অনেককে হত্যা করা হয়েছে’ কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ-এর প্রিয় উদ্ধৃতি এটি।
৪ এনজিও কর্মীকে রাজধানী থেকে পুলিশ আটক করেছে এবং উদ্ধার করা হয়েছে ১০ শিশুকে। পুলিশের বক্তব্য তারা শিশু পাচারের সাথে জড়িত। মামলাও হয়েছে। কিন্তু বাধ সেধেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ মাধ্যমে উঠে এসেছে গ্রেফতারকৃতরা মূলত পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন। স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে তারা পথশিশুদের কিছুটা হলেও ভালো জীবনের আস্বাদ দেয়ার চেষ্টা করেন। গত ঈদেও ঢাকার একটি খ্যাত রেস্টুরেন্টে বেশ কিছু পথশিশুকে তারা ভরপেট কাবাব খাইয়েছেন। তাদের চেষ্টা ছিল পথশিশুরাও যেন ঈদের দিন কিছুটা ভালো খাবার ও কিছু আনন্দময় জীবন পায়। হয়তো এটাই তাদের অপরাধ। মানুষকে ভালোবাসার অপরাধ। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কথাই আলোড়িত হচ্ছে।
এ ব্যাপারটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব হবার পর টনক নড়ে আমাদের গণমাধ্যমগুলোর। কয়েকটি মাধ্যম আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠে। ক্রমে সরব হয় অন্যরাও। অদ্ভুত বিষয় হলো সারা বিশ্বের সর্বত্রই সাধারণত গণমাধ্যমের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। সাম্প্রতিক প্রকৃষ্ট উদাহরণ অভিবাসী শিশু আয়লান। গণমাধ্যম দেখিয়ে দেয়ার পর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঝড় বয়ে গেছে বিষয়টি নিয়ে।
কিন্ত আমাদের দেশের গণমাধ্যমের ব্যাপার ও বিষয় মনে হয় অনেকটা আলাদা। আমাদের দেশের এক সেলিব্রেটি টিভি অভিনেত্রীর মোবাইল ফোন চুরির বিষয়টি গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। আবার সেই অভিনেত্রীর ফোন ফিরে পাবার ব্যাপারটিরও ফলোআপ দেয়া হয় গণমাধ্যমে। কিন্তু এমন কিছু ব্যাপারে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখে আমাদের অনেক গণমাধ্যম যেখানে তাদের দৃষ্টিপাত অতিপ্রয়োজনীয় ছিল। ‘আপ’ যেখানে নেই ফলোআপ তো ‘দূরকা বাত’। এমন রকম গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন করেন- প্রশ্ন ওঠে তাদের পেশাদারিত্ব নিয়ে, তখন?
‘নো চিন্তা’- পেশাদারিত্ব অনুশীলন না করলেও কী করে বিভিন্ন বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায় তার চর্চাতে আমাদের কমতি নেই।
যা হোক নিজেদের লেজ নিয়ে আর টানাটানি নয়। লেজ না থাকলে কী নেড়ে আমরা কেউ কেউ আমাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিব, কী করে বোঝাব ‘মেরেছ কলসী কানা তাই বলে কি প্রেম দিব না’ এর মতন ‘ক্লাসিক’ একটি দর্শনকে।
আমরা ফিরে আসি ৪ এনজিও কর্মীর ব্যাপারে। আমার এ লিখা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত তাদের জামিন হয়নি। হয়তো হবে, হয়তো বা না। পুলিশ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে তারা শিশু পাচারকারী। গ্রেফতারকৃতদের আইনজীবী প্রমাণ করতে চেষ্টা করবেন তারা নির্দোষ।
কিন্তু গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের মহেশপুরে রাজু আহম্মেদ নামে এক আসামিকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ১১ মাস বয়সী শিশু পুত্রকে ১৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় থানাহাজতে- এমন একটি খবর জায়গা করে নিয়েছে গণমাধ্যমে। কোনো কোনো গণমাধ্যম লিখেছে ‘১১ মাস বয়সী শিশুর ১৯ ঘন্টা কারাবাস’- এ শিশুটিকে কোন যুক্তিতে দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করা হবে! তবে এমন খবর সঠিক সময়ে প্রকাশ প্রমান করে আমাদের গণমাধ্যমের অনেকগুলোরই সময়মত ঘুমও ভাঙ্গে।
গণমাধ্যমের ঘুম ভাঙ্গুক আর নাই ভাঙ্গুক আমাদের মানবিকতা-মানবিক মূল্যবোধ সব ভেঙ্গে পড়ছে। তা-না হলে কেন ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষিতা হতে হবে, কেন গলিত লাশ পাওয়া যাবে প্রথম শ্রেণী পড়ুয়া বাচ্চার, যাকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা হয়েছিল, কেন ভাইয়ের সামনে বোন নির্যাতিতা হবে!
সমাজ আজ কোন পথে এগুচ্ছে। সমাজপতিসহ সব ‘পতি’ লাভ-ক্ষতির হিসাব নিকাশে আজ নিজেদের মধ্যে বাহাসে লিপ্ত। তাদের বাহাসের বাতাসে দেশের সামাজিক অঙ্গনসহ সকল আঙ্গিনাই ক্রমেই ধূলিময় হয়ে উঠছে। বাড়ছে সতর্ক সংকেত–বেড়ে বেড়ে এখন ‘বিপদ সংকেত’ ৯ নম্বরে।
যারা সমাজ ও রাষ্ট্র ‘নিয়ন্ত্রক’ ‘সমাজপতি’ থেকে শুরু করে সকল ‘পতি’রাই এখনো না ফিরলে এবং না ফেরালে ধুলিঝড় সাইক্লোনে পরিণত হয়ে সব ধ্বংস করে দেবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না ধ্বংসের তাণ্ডব দেখা আর ক্ষতির হিসাব নিকাশ করা ছাড়া।
এখনো সময় আছে। অল্প হলেও বিপদ মোকাবেলার সম্ভাবনা এখনো ফুরিয়ে যায়নি, এখনো ফেরার এবং ফেরানোটা অসম্ভব নয়।
ফুটনোট: হতাশা নয় আশা দিয়ে লিখাটি শেষ করতে চেয়েছিলাম। পারলাম না। সিরীয় শরনার্থীদের খবর নিতে গিয়ে বিবিসি বাংলা খুলতেই দেখতে পেলাম টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে ছেলের সামনে মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনে ঘটনা। ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত দুই প্রতিবাদকারী।
বিবিসির মতো একটি বিদেশি গণমাধ্যমে যখন এমন ঘটনা জায়গা করে নেয় তখন মনে হয়, এ কোন দেশ! যেখানে ছেলের সামনে মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়!
আমরা বলি দেশমাতৃকা। অর্থাৎ সম্পর্কের দিক থেকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয় মাকে, তাই মার সাথে তুলনা করা হয় দেশকে। একজন মা যখন এমন বর্বর নির্যাতনের শিকার হন, তখন দেশ কি আর মাতৃকার জায়গায় থাকে!
এরপরও কি ফেরা ও ফেরানো সম্ভব, এখন নিজেও ক্রমশ সন্দিহান হয়ে উঠছি। কিন্তু আশা ছাড়া তো মানুষ বাঁচে না। এত সবের পরেও আমাদের বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে। এর কোনো বিকল্প কি আছে?
কাকন রেজা: সাংবাদিক

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
অনুসরণ করুন:
কর্মজীবী এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!