সাময়িকী.কম
আহমেদ মোহাম্মদ, ১৪ বছর বয়সের মুসলমান এই কিশোর এখন সারাবিশ্বের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ঘরে বসে একটি সার্কিট বোর্ড থেকে ঘড়ি বানিয়ে প্রথমে ব্যাপক ঝামেলায় পড়লেও এখন তাকে ওয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একইসাথে ফেসবুক, গুগল এবং নাসা থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আলোচিত সেই ঘড়ি নিয়ে দেখা করার। অথচ গত ১৬ সেপ্টেম্বর কী হেনস্থাটাই না তাকে হতে হয়েছে এই ঘড়ির জন্য! তাকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়, আরেকটু হলে রিমান্ডের মুখোমুখি হতে হতো তাকে।
নবম গ্রেডের ছাত্র আহমেদ বসবাস করে টেক্সাসের আরভিং এ। ঘরে বসে সার্কিট বোর্ড থেকে ডিজিটাল ঘড়ি বানিয়ে তা দেখানোর জন্য নিয়ে যায় স্কুলের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষকের কাছে। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষক ঘড়িটি দেখে ‘নাইস’ বলে প্রশংসা করে আহমেদকে উপদেশ দেয়, সে যেন আর ঘড়িটি কাউকে না দেখায়। কিন্তু কাউকে না দেখালেও ঘড়ির এলার্ম বিপের শব্দে ইংরেজি ক্লাশে বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায়। এবং ইংরেজি ক্লাশের শিক্ষিকা ঘড়িটিকে বোমার মত দেখতে বলে মনে করেন। যদিও আহমেদ এর ভাষ্য অনুযায়ী ঘড়িটি দেখতে মোটেই বোমার মত নয়। এরপরে সেদিনই স্কুলে ৫ পুলিশ এসে তাকে অধ্যক্ষের সামনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারপর অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে হাতকড়া পরিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জুভিনাইল ডিটেনশন সেন্টারে। সেখানে তার অাঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয়।
যদিও উদ্ধর্তন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, আহমেদ কখনোই বলেনি ঘড়িটি বোমা, সে জিনিসটিকে ঘড়ির মতই বানিয়েছে, তবে এটি বাথরুম কিংবা গাড়ির নিচে পড়ে থাকলে এটিকে বোমা বলে মনে হতে পারতো এবং তা সকলকে আতংকিত করতো। এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, স্কুলে কোথাও কোন জিনিস দেখে এবং কারো আচরণে সন্দেহজনক কিছু দেখলে বা প্রকাশ পেলে তা ছাত্র বা স্টাফদেরকে বলা আছে তারা যেন সাথে সাথে তা আমাদের অবহিত করে, স্কুলের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ব্যবস্থা।
কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, যখন আহমেদ একটি টিভি চ্যানেলে বলেছে, তাকে স্কুলে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে তার পিতামাতার সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময়কার পুলিশের নির্মম আচরণ সম্পর্কে সেই সাক্ষাতকারে আহমেদ বলেছে, আমার সাথে এমন খারাপ আচরণ করা হয়েছে যেন আমি কোন মানুষ নই, ক্রিমিনাল।
এই ঘটনায় আহমেদের ক্ষুব্ধ পিতা আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে এই খবর মিডিয়ায় প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই নয়, খোদ ফেসবুকের অধিকর্তা জাকারবার্গ আহমেদকে ফেসবুকের অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, আহমেদ এর মত ছেলেরাই আমাদের ভবিষ্যত। এই ঘড়ি তৈরির অভিলাষের জন্য তার হাততালি প্রাপ্য ছিল, গ্রেফতার নয়। গ্রেফতারের সময় আহমেদের গায়ের টি শার্টে নাসা’র লোগো থাকায় বাদ যায় নি, টুইটার বার্তায় নাসা’র এক বিজ্ঞানীর পক্ষ থেকে নাসা’য় যাবার আমন্ত্রণ। নাসা’র বিজ্ঞানী ক্রিস ম্যাটম্যান এর মতো গুগল টিমের পক্ষ থেকে জেমি ক্যাসপও গুগল ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন টুইটারে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টুইটারে, আহমেদের ঘড়িকে ‘কুল ক্লক’ বলে প্রশংসা করে, আহমেদকে জানিয়েছেন ঘড়িসহ হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ। বারাক অবামা বলেছেন, আমাদের উচিত তোমার মত কিশোর, যারা বিজ্ঞানকে ভালবাসো তোমাদেরকে আরো উৎসাহিত করা। আর এটাই আমেরিকাকে বিশালত্ব এনে দেবে।
উল্লেখ্য এই ডিজিটাল ঘড়ি বানানোর অপরাধে আহমেদকে স্কুল থেকে ৪দিনের জন্য সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সকলের প্রশ্ন এখন আহমেদকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্থার বৈধতা নিয়ে। এই ঘটনার পেছনে স্কুল এবং পুলিশের মুসলিম বিরোধী ভূমিকার হীন প্রয়াস থাকুক চাই না থাকুক কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডেমোক্রেটরা যে মুসলিম ভোটের জন্য তৎপর তা সহজেই অনুমেয়।
ডা. সজল আশফাক, নিউ ইয়র্ক থেকে