সাময়িকী.কম
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
মঙ্গলবার মাত্র ঘন্টা দু’য়েকের বৃষ্টিতে এই ছিল ঢাকার অনেক এলাকার চিত্র। (ফাইল ছবি) |
ঢাকা শহরের বাসিন্দারা প্রতি বছর বৃষ্টির মৌসুমে একটা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান। আর তা হলো একটু ভারি বৃষ্টি হলেই শহরের রাস্তাঘাটে জমে যাওয়া পানি। আর তাতে তৈরী হয় ব্যাপক জনদুর্ভোগ।
আবার একইভাবে প্রতিবছর এই জলজট দূর করার নানা প্রকল্পের কথাও শোনা যায়। কিন্তু তাতে অবস্থার কোন উন্নতি হয়েছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়না।
ঢাকায় কেন দূর হচ্ছে না বৃষ্টির মৌসুমের জলজট?
ঢাকার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে লোহার রডের ব্যবসা করেন জালালুদ্দিন। বৃষ্টির পানি উঠে জং ধরে গেছে ক’দিন আগে দোকানে তোলা রডের চালানে।
পাশ দিয়ে খুব আস্তে করে গাড়ি গেলেও উঁচু দোকানগুলোতেও ঢুকে যাচ্ছে পানি।
ঢাকার সব নোংরা এসেছে মিশেছে সেই পানিতে। আর সেই পানি পার হয়ে স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন শরফ আফজা।
গতকাল মাত্র ঘন্টা দু’য়েকের বৃষ্টিতে এই ছিল ঢাকার অনেক এলাকার চিত্র।
একটু ভারি বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাওয়া, ঢাকার বহু বাসিন্দাদের জন্য প্রতি বছরের অভিজ্ঞতা।
মঙ্গলবারের বৃষ্টির পর রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারের পরিস্থিতি। (ফাইল ছবি) |
ঢাকার এই হঠাৎ জমে যাওয়া পানি দূর করতে কাজ করছে মোট পাঁচটি কর্তৃপক্ষ।
চলছে খাল উদ্ধার, ঝিল খনন, নতুন পাম্প হাউজ বসানোর প্রকল্প। ড্রেইনেজ ব্যবস্থা তৈরী করতে নানা এলাকায় বছর জুড়ে খোড়াখুড়ি। তাতে খরচ হচ্ছে শত শত কোটি টাকাও।
কিন্তু বছর ঘুরে আবারো বর্ষার মৌসুম এলে ময়লা পানিতে পা চুবিয়ে গন্তব্য যাওয়ার অভিজ্ঞতায় রয়েই যাচ্ছে।
পানি নিষ্কাষনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী পরিচালক তাকসিম এ খান বলছেন, বৃষ্টির পানি সরে কোথায় গিয়ে জমা হবে সেটি নিশ্চিত না করলে সমস্যা মোকাবেলা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
তিনি বলছেন ঢাকার পানি নিষ্কাষনের প্রাকৃতিক পদ্ধতি ছিল খালের মাধ্যমে। সেই খালগুলো এখন আর নেই।
৫৬ খালের মধ্যে আছে ২৬ টি কিন্তু তাও তার আগের রুপে নেই। প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়।
অনেক খালের উপর বক্স কালভার্ট করাকে তিনি বলছেন ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বক্স কালভার্ট দিয়ে চার ভাগের তিনভাগ পানিই নিষ্কাষন হয়না।
এছাড়া ঢাকার আশেপাশের যেসব নিম্নাঞ্চলে পানি যেত সেগুলো দখল হয়ে বাড়িঘর উঠে গেছে।
নির্বাহী পরিচালক তাকসিম এ খানের মতে ঢাকা হয়ে উঠেছে একটা বালতির মতো। যার চারপাশ উঁচু।
একটু ভারি বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে পানি জমে গিয়ে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। (ফাইল ছবি) |
এখানে তাই পানি জমলে বালতি থেকে পানি ছেঁচে ফেলার মতো পাম্প দিয়ে তুলে ফেলতে হয়। যেটি কোন সমাধান নয় বলে তিনি মনে করেন।
ড্রেইনেজ ব্যবস্থার ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি বৃষ্টি হয় তাই সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। কারণ এই পানি যাওয়ার আর কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
তাঁর মতে ঢাকার পানি নিস্কাষনের দায়িত্ব থাকতে হবে একটি কর্তৃপক্ষের হাতে।
ঢাকায় পানি নির্গমণে নানারকম দায়িত্বে আছে ঢাকা ওয়াসা, ডিসিসির দু’পাশের কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর রাজউক।
মি: খান মনে করেন পানি নিষ্কাষনের সাথে যুক্ত সকল কাজের দায়িত্ব হওয়া উচিত সিটি কর্পোরেশনের।
অনেক বেশি কর্তৃপক্ষ জড়িত থাকায় কোন কাজই সময়মতো শেষ হয়না আর প্রকল্পের মানও কমে যায় বলছিলেন নগর পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ খন্দকার আজহারুল হক।
প্রকল্পের ধীরগতি, কর্তৃপক্ষের একে অপরকে দোষারোপ, ক্ষমতাবানদের খাল আর ঝিল দখল, সবমিলিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ। যা থেকে নগরবাসীর সহসা নিস্তার মিলবে এমন লক্ষণ আপাতত চোখে পড়ছে না।