কোনো অর্থ ফেরত পাননি ডেসটিনি যুবকের গ্রাহকরা

ফয়সাল কবির
ফয়সাল কবির - ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
6 মিনিটে পড়ুন

সাময়িকী.কম

 বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদন 

Destiny jubok samoyiki কোনো অর্থ ফেরত পাননি ডেসটিনি যুবকের গ্রাহকরা


আলী রিয়াজ
বছরের পর বছর গেল। এক টাকাও ফেরত পাননি ডেসটিনি ও যুবকের প্রতারিত গ্রাহকরা। এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এর কর্মকর্তারা এখন বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শুধু প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন এখনো জেলে রয়েছেন। আর যুবকের ৩ লাখ গ্রাহকও বছরের পর বছর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ফেরত পাননি এক টাকাও। জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করলেও সরকারের জিম্মায় রয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে সিলড হিসেবে আছে ২০০ কোটি টাকা এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রয়েছে জমি, কল-কারখানা ও ভবন। যার মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও তার কোনো সমাধান হয়নি। তবে ডেসটিনি তাদের আত্মসাতের বেশির ভাগ টাকাই মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাচার করা টাকা ফেরত আনার বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত জমি, কারখানাও সরকার নিজের জিম্মায় নিয়ে যায়। পরে এসব সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে। পুলিশ এসব সম্পদের নিরাপত্তা দিয়ে রাখলেও অযত্ন-অবহেলায় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কারখানায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মেশিনারিজ। জানা গেছে, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করে। ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের নামে স্বল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে ৬ কোটি গাছ রোপণের কথা বলে সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারীর ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন গ্রুপ-সংশ্লিষ্টরা। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের ১২ জনের বিরুদ্ধে এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করে দুদক। এসব মামলার সব আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জামিন নিয়ে ফের তারা ভিন্ন নামে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

পাঁচ বছরের বেশি হলেও এই মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির অর্থ ও সম্পদ এখনো গচ্ছিত আছে বিভিন্ন ব্যাংক ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখন চেষ্টা চলছে ফের ডেসটিনি চালু করার। এ জন্য মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসা বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন ডেসটিনি-সংশ্লিষ্টরা। তারা ইতিমধ্যে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনাও করছেন। এর মধ্যে এবি নিউট্রিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, অ্যাডভান্স বাংলা, দেশান বাংলাদেশ, ডি ক্লাসিক লাইফ, ড্রিম টুগেদার, এক্সিলেন্ট ফিউচার মার্কেটিং, ফরইভার লিভিং প্রডাক্টস, পিনাসেল সোর্সিং, রিচ বাংলাদেশ সিস্টেমস, এসএমএন গ্লোবাল, সানুস লাইফ, থানসি বাংলাদেশ, লাইফওয়ে বিডি, লাক্সার গ্লোবাল এন, ম্যাকনম ইন্টারন্যাশনাল, মিশন-১০, এমওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, ভিশন ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়ার্ল্ড মিশন-২১, এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করলেও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অভিযোগ উঠেছে, ডেসটিনির কর্মকর্তারাই ভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে এখনো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেসটিনির কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান বলেন, ডেসটিনির বেশির ভাগ সম্পদ সরকারের জিম্মায় আছে। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া-না দেওয়া সরকারের বিষয়। আমাদের হাতে এখন কোনো কিছুই নেই। সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা তারাই বলতে পারে। কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা এ ব্যবসায় এখন জড়িত নেই।


দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন যুবকের গ্রাহকরা : যুবক সম্পর্কিত সরকার গঠিত কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতারণার মাধ্যমে ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে যুবক। এ টাকা নেওয়া হয় ৩ লাখ ৩ হাজার ৭০০ গ্রাহকের কাছ থেকে। গ্রাহককে এসব টাকা ফেরত দিতে ও সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে কমিশন। দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত করে ২০১৩ সালের জুনে কমিশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ওই প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। ২০০৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক তদন্তে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ সংগ্রহের ঘটনা বেরিয়ে আসে। ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়সীমা ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু যুবক টাকা শোধ করেনি। পরে গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা পরিশোধ ও হয়রানি বন্ধ, সম্পত্তি হস্তান্তর স্থগিতাদেশ ও প্রশাসক নিয়োগ করে স্থায়ী সমাধানের জন্য ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদকে চেয়ারম্যান করে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১১ সালের মে মাসে সাবেক যুগ্ম-সচিব রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় যুবকবিষয়ক স্থায়ী কমিশন। এ কমিশনের দায়িত্ব ছিল যুবকের সম্পদ আয়ত্তে নিয়ে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা করতে সমর্থ হয়নি কমিশন। শেষে ২০১৩ সালের জুনে যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে অর্থমন্ত্রীর কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে যুবক কমিশন।

সর্বশেষ পরিস্থিতি : যুবকের গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সে সম্পর্কে সুপারিশ দিতে গত বছরের আগস্টে যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি বেশকিছু বৈঠক করে আইনি বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ‘যুবকে’ ‘প্রশাসক’ নিয়োগ ছাড়াও এ ধরনের প্রতারক কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের সুপারিশ করে। সুপারিশে প্রস্তাবিত কমিশনের নেতৃত্বে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। পরে এ বিষয়ে ভেটিং নিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রস্তাবিত সুপারিশমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত মাসে আইন মন্ত্রণালয় ওই ফাইল ফেরত পাঠিয়েছে কোনো ধরনের ভেটিং ছাড়াই। সমস্যা সমাধানে বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
অনুসরণ করুন:
কর্মজীবী এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!