রফিকুল ইসলাম সাগর
সাময়িকী.কম
হরর গল্প
সাময়িকী.কম
হরর গল্প
জানালাতে কে যেন উকি দিল! ঘড়ির কাটায় রাত দেড়টা। এত রাতে কে উকি দিল। একা ঘরে মনের মধ্যে কেমন জানি ভয় ঢুকে গেল। নাহ! বাড়ির গেইট তো লাগানো, কে উকি দিবে। এটা আমার মনের ভুল। এই ভেবে ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে আবার টিভি দেখতে থাকলো রিফাত। টিভিটা টেবিলের উপর রাখা। তার পিছনেই ঘরের জানালা। জানালার একটি পার্ট খোলা। টিভি দেখতে দেখতে জানালার খোলা পার্টটিতে চোখ পরতেই কে যেন উকি দিয়ে সরে গেল। এবার ভয় দিগুন বেড়ে যায়। ভয়ে গোটা শরীর কেমন জানি নিস্তব্দ হয়ে গেল। কান যেন গরম হয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। রিফাত ভাবলো জানালার পার্ট বন্ধ করে দিবে। কিন্তু সামনে এগিয়ে এ কাজটি করতে ভয় পাচ্ছে। যদি ভূত টুত হয়ে থাকে। জানালা বন্ধ করতে গিয়ে ভূত যদি হাত ধরে ফেলে। এমন ভাবলেও সাহস করে জানালার পার্টটা সূরা পড়তে পড়তে এগিয়ে গিয়ে বন্ধ করেই দিল।
এত বড় বাড়িতে রিফাত একা। বাবা-মা গেছে বোনের বাড়িতে বেড়াতে। বড় ভাই বাইরে। ভাইয়া ফিরলে গেইট খুলতে হবে। বড় ভাই প্রতিদিন দেরিতেই বাড়ি ফিরে। টিভি বন্ধ করে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল রিফাত। খা খা গরমে কাথা দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে শুয়ে আছে। এমনকি মুখও ঢাকা। ত্রিশ মিনিট হবে শুয়ে থাকলো। তবে আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক করায় ঘুম আসছে না। ঘামে গোটা শরীর ভিজে একাকার। বড় ভাই এখনো বাড়ি আসছে না, খুব রাগ হচ্ছে ভাইয়ের ওপর। মনে মনে গালাগাল করল বড় ভাইকে। অস্থিরতায় ড্রয়িং রুমে এসে আবার টিভি ছাড়ল। সোফায় না এবার বালিশ নিয়ে এসে ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। একটুপর চোখ পড়ল দরজার নিচে একটু ফাঁকা জায়গায়। কে যেন হাটছে দেখা যাচ্ছে। ভয়ে ডোগ গিলল রিফাত। এসব কি হচ্ছে! কান্দন আসছে। মনে হলো বড় ভাই ভয় দেখাচ্ছে নাতো। হ্যা তাই হবে মনে মনে ভাবলো। সাহস করে দরজা খুলল। বাইরে তাকিয়ে দেখল কেউই নেই। মুহুর্তেই তাড়াহুড়া করে দরজা লাগিয়ে দিল। আর তখনই কনিং বেল বেজে উঠল। ওহ! ভাইয়া এসেছে। নিশ্চিন্তে শ্বাস ফেলল।
ঘরের দরজা খুলে এক দৌড়ে বাড়ির গেইট খুলল। কিন্তু গেইট খুলে কাউকে দেখতে পেলনা। শরীর ভয়ে কাপুনি দিয়ে উঠল। বামে ডানে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলনা। হটাত বাড়ির সামনের তালগাছ থেকে নিচে কি যেন একটা পরার শব্দ কানে এলো। পরপর দু’বার। ভয়ে ভয়ে তালগাছের দিকে তাকায় রিফাত। তালগাছের একেবারে উপরে আগুনের গোল্লার মতো কি যেন জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। ভয়ে শরীরের সব গুলো লোম দাড়িয়ে যায়। সাথে সাথে গেইট না লাগিয়েই দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেল। দরজা আটকিয়ে দিল। সবগুলো ঘরের বাতি জ্বালিয়ে রাখল।
এবার বাইরে থেকে একজন মহিলার গলা শুনতে পেল, ‘মাগো আমার বাচ্চারে একটু দুধ খাইতে দিবেন’। এতো রাতে ভিক্ষুক! কিছুটা অবাক হলেও সাহস পায়। কে? বলে জবাব দেয় রিফাত। দরজার বাইরে থেকে মহিলাটি এবার বলল, ভাইজান আমার মাইয়্যাটারে একটু দুধ খাইতে দিবেন? দাড়ান বলে দরজা খুলে রিফাত। কিন্তু যা দেখল তার জন্য সে প্রস্তুত ছিলনা। দরজা খুলে দেখতে পেল কেউই নেই। সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিল। আর ভাবল তাহলে কে কথা বলল! এর মধ্যেই দরজার ওপাশ থেকে বড় ভাইয়ের গলার আওয়াজ, রিফাত দরজা খোল। দরজা খুলেই বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে রিফাত। এবং সব ঘটনা ভাইয়্যাকে কাদো কাদো গলায় বলে।