সাময়িকী.কম
শুক্রবার ২৪ জুলাই :: সেকান্দার আলী, চট্টগ্রাম থেকে : খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রত্যেকেই মাঠে আসার জন্য প্রস্তুত হলেন। খেলার পোশাকে হোটেল লবিতে নেমে এসে পায়চারী করতে থাকেন তারা। বৃষ্টি থামলেই মাঠে যাবেন ক্রিকেট মাতাতে। কিন্তু বৃষ্টি এতটাই বিরামহীনভাবে ঝরছিল, ম্যাচ অফিসিয়ালরাও মাঠে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। ম্যাচ রেফারির ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে উভয় দল। দুপুর দেড়টায় ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড ফোন করে চতুর্থ দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণার খবর দিলেন।
গত চার দিনে ৩৬০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টি আর আবহাওয়ার কারণে সেখানে ২২১ ওভার খেলা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা দুই ইনিংসে ১০৪.৫ (৮৩.৪ ও ২১.১) ওভার; আর স্বাগতিক বাংলাদেশ এক ইনিংসে ১১৭.১ ওভার ব্যাট করে। চার দিনে ১৩৯ ওভার (প্রথম দিন ৪.২, দ্বিতীয় দিন ২৫, তৃতীয় দিন ২৪.৫; আর চতুর্থ দিন ৯০ ওভার) খেয়ে নিয়েছে বৃষ্টি। অথচ বাংলাদেশ দল খুব করে চেয়েছিল টেস্টের শেষ দুই দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে খেলতে। মূলত মাঠের পারফরম্যান্সের কারণেই তারা স্বপ্ন দেখছিলন ভালো কিছুর।
প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে বেঁধে ফেলে ৩২৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করে বাংলাদেশ। ৭৮ রানে পিছিয়ে থেকে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ২১.১ ওভারে ৬১ রান করে প্রোটিয়ারা। এখনও ১৭ রানে পিছিয়ে তারা। পিচ অনেকটাই স্পিন সহায়ক হয়ে উঠেছিল। আর তাতেই স্বাগতিক খেলোয়াড়দের চোখ চকচক করে। সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, জোবায়ের হোসেনের হাতে তারা ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলেন। এজন্যই মরিয়া হয়ে ওঠেন খেলার জন্য। ইমরুল কায়েসের কথাতেই তা স্পষ্ট, ‘আমরা এ টেস্টটা ভালোভাবেই লিড করছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে খেলাটা পাঁচ দিন মাঠে থাকল না। থাকলে আমাদের জন্য ইতিবাচক ফল হতে পারত। আমরা খুব ভালোমতো টেস্টটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটা ইতিবাচক দিক, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে প্রভাব নিয়ে খেলা সম্ভব হচ্ছে।’ ম্যানেজার খালেদ মাহমুদও হতাশার কথাই শোনালেন, ‘খেলতে না পারলে তো অবশ্যই খারাপ লাগাই একটা ব্যাপার। টেস্ট ম্যাচটা দুই দলের জন্যই উন্মুক্ত ছিল। আমরা একটু হলেও এগিয়ে ছিলাম; ১৭ রান লিড থাকায়। খেলা না হওয়ায় খারাপ তো লাগছেই। জমজমাট টেস্ট ম্যাচ হতে পারত, আমরা হয়তো ভালোভাবে শেষও করতে পারতাম।’
বৃষ্টিতে গতকাল খেলা না হওয়ায় হোটেল থেকে বের হননি দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা। হোটেলের জিমে ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। স্বাগতিক দল অবশ্য হোটেলে বসে থাকেনি। দুপুরে মাঠে এসে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন মুশফিকুর রহিমরা। মধ্যাহ্নভোজ সেরে জিম আর ইনডোর নেট সেশন করেন কেউ কেউ। ১১ জন এসেছিলেন মাঠে। এ দলে ছিলেন না সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস ও নাসির হোসেন। তারা হোটেলেই বিশ্রাম করেন। রুদ্ধদ্বার ইনডোর নেট সেশন করেন মুশফিক, তাইজুল, মোহাম্মদ শহীদ, জোবায়ের ও মুস্তাফিজুর রহমান। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ঠিক থাকলে আজও অনুশীলন করেই কাটাতে হতে পারে তাদের। ইমরুল বলেন, ‘কাল (আজ) বৃষ্টি হলে কিছু করার থাকবে না। খেলা হলে চেষ্টা করব তাদের অলআউট করে আমরা ব্যাট করতে।’
আজ শেষ দিন খেলা হলে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী হবে- এ সম্পর্কে ইমরুল বলেন, ‘পিচ পুরোটাই কাভার করা আছে। ড্যাম হয়ে যাবে। কাভার না ওঠালে স্বাভাবিক থাকে না। আমার মনে হয়, স্পিনাররা কিছুটা সুবিধা পাবেন। সাকিব, তাইজুল যদি ভালো বোলিং করতে পারেন, তাদের অলআউট করতে সক্ষম হব।’ চট্টগ্রাম টেস্টের ভাগ্য মোটামুটি জানা। অলৌকিক কিছু না ঘটলে ড্র মেনেই শেষ করতে হবে। আর এ ড্র টেস্ট থেকেও অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঢাকা ফিরতে পারবেন খেলোয়াড়রা। সে বিশ্বাস আছে বলেই তো গতকাল জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবালের রেস্তোরাঁ দমফুকে অফিসিয়াল ডিনার করেন খেলোয়াড়রা। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ