উত্তরাধুনিকতা ও কবি জফির সেতুর কবিতা কাব্য বিশ্লেষণ/ কাব্য সমালোচনা পর্ব-৩

ফয়সাল কবির
ফয়সাল কবির - ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
13 মিনিটে পড়ুন
635681491493377583 wilderness in blue far away from concrete উত্তরাধুনিকতা ও কবি জফির সেতুর কবিতা কাব্য বিশ্লেষণ/ কাব্য সমালোচনা পর্ব-৩

সাময়িকী.কম

কবিতা কবিতা হয়ে ওঠে উপমার সুনিপুন ব্যবহারে। কবিতা উপমা থেকে যাপনের দৃশ্যবিস্তারে ধাবিত হওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জএকটু এদিক-সেদিক হলেই যেন তা নিজস্ব অক্ষ রেখা থেকে ছিটকে পড়ে। লক্ষ্য করার মত ঘটনা হল ষাটের দশকে বাংলা নন্দন কবিতার পর সত্তর আশিতে গিয়ে পাঠক বিভ্রান্ত হতে থাকে, নতুনত্বর খরায় ভুগতে শুরু করে আবার আশির শেষদিক থেকে বাংলা কবিতা পুনরায় নন্দনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কবিতার শৈল্পিক বিনির্মানে নান্দিকতাও তখন ছিল চোখে পড়ার মত। চিত্রের ক্যানভাসে আল্পনা আঁকার মত নির্মাণের অযুত কলা কৌশলের চর্চা বেড়ে যায়। তবে বিমূর্ততার জটিলতা তার ফাঁক ফোঁকর থেকে আরো গভীরে প্রোথিত করে কবিতাকে। পরিবর্তনের পটভূমিকায় নব্বইয়ের এই প্রবণতা কবিতার স্বাভাবিক বিবর্তন থেকে কিছুটা সরে আসে। নন্দনের ব্যাপক ইলিউশন হাজির হয় কবিতায়। মূলত নব্বইয়ের পর থেকে বাংলা কবিতার প্যাটার্ন বদলে যেতে থাকে খুব দ্রুত। প্রথম দশকে প্রত্যাশিত পরিবর্তনের আবহাওয়া দৃশ্যমান হলে, বিমূর্ততার জমাট বরফের চাঁই গলতে শুরু করে, ধীরে ধীরে তা পাঠকদের ভেতরেও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। কবিতা উপস্থাপনের নতুন অলিগলিতে স্নিগ্ধতা বিরাজ করতে থাকে এই স্নিগ্ধতার ভেতর দিয়েই কাব্যবাগানে ঢুকে পড়ে ২য় দশক। বৈশ্বিক জটিলতা তথা বিশ্বসভ্যতায় সম্পর্কের টানাপোড়েনের চিত্র অঙ্কন করতে করতে ১ম দশকের শেষের দিক থেকে ২য় দশকের কবিদের ভেতর নির্মাণের যে মধু জড়ো হতে থাকে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

মোদ্দাকথা, নব্বইয়ের পর থেকে কবিতায় মূলত দুটি দিক প্রবল হয়ে ওঠে। যা কবিতাকে পৃথক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। এই দুটি দিক হল-

১. স্টাইল

২. নন্দন শিল্প

প্রকৃতপক্ষে স্টাইলটা হল আপেক্ষিক। যদিও উত্তরাধুনিক কবিদের মধ্যে সে ভাবধারা বিশেষ লক্ষ্যণীয়। মূলত নন্দন শিল্পই স্থায়ী। কবিতাকে মহাকালে শতাব্দির পর শতাব্দি টিকিয়ে রাখতে পারে নন্দন শিল্প। জফির সেতুর কবিতাতে উর্পুক্ত দুটি লক্ষণই বিদ্যমান।     তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় দিক হল তাঁর কবিতার নন্দনশিল্প

অবশ্য ড. জফির সেতুর কবিতার বিশ্লেষণের পূর্বে উত্তরাধুনিকতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়া প্রয়োজন।

ফেদেরিকো ওনিস ১৯৩৮ সালে মাদ্রিদে প্রকাশিত কবিতা সংকলন পুস্তক”-এ ‘Postmodernism’ শব্দটি সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয় এই শব্দ দ্বিতীয় বার উচ্চারিত হয় ১৯৪২ সালে। ডাডলি সম্পাদিত সমকালীন লাতিনআমেরিকান কবিতাসংগ্রহে। টয়েনবির পশ্চিমী সভ্যতার নবপর্ব হিসাবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। পঞ্চাশের দশকে চার্লস ভলসন প্রায়ই ‘উত্তরাধুনিকতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ইহাব হাসান ও লেসলি দিল্ডার ষাটের দশকে একটু অপরিণিত ভঙ্গিতে ‘উত্তরাধুনিকতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ষাটের দশকে প্রাইস বলেছেন, “খুলে দাও বাসনার সকল শিকল, প্রবৃত্তির সবগুলো বাঁধন, নিয়মের সকল কানুন, সংযমের সকল সীমা। নগ্ন হও, উলঙ্গ হও, ফিরে যাও বুনো মানুষের স্বভাবে ব্রাউনের ভাবনার এই ভঙ্গিকে বেল পোষ্ট মডার্ন মুডবলেছেন।

কিছু মানুষ ভাবেন, উত্তরাধুনিকতা হচ্ছে আধুনিকতার পরের সময়টি। কিন্তু এটি কোনো সময়ের বিচার নয়, এটি কালানুক্রমিক কোনো বিবর্তন নয়। উত্তরাধুনিকতা হলো একটি প্রবণতা। প্রবণতাটা শুরু হয়েছিল আধুনিকতার অনেকগুলো স্বেচ্ছাচারের কারণে। আধুনিকতার ভেতর অনেক আদর্শবাদও ঢুকে পড়েছিল। অবশ্য এ নিয়ে অনেক বিতর্ক চলে আসছে বহুদিন ধরেই।

মূলত আধুনিকতার আরেকটি ব্যাপার ছিল কেন্দ্রিকতা।এ কেন্দ্রিকতার সঙ্গে ইউরোপের কেন্দ্রিকতা যুক্ত হয়ে গেল। যখন আধুনিকতার সূত্রপাত হলো আবার সেই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান হয়ে ওঠল। অনেকটা সেই মধ্যযুগের মতো। তবে এবার অন্য নামে। তারা জানান দিল, এবার তারা আদর্শের দিকে যাচ্ছে, সত্যের সন্ধানে যাচ্ছে। নিজস্ব চেতানার বহিঃপ্রকাশে তারা ছিল খুবই তৎপর। এক পর্যায়ে কয়েকটা দেশ বাদে গোটা ইউরোপেই ঔপনিবেশি শাসন শুরু করল বিশ্বজুড়ে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ, তাদের শাসন শুরু হয়েছিল এ সূত্র দেখিয়ে যে, তারা পৃথিবীর অনাধুনিক অঞ্চলসমূহে আধুনিকতার আলো নিয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের সৃষ্ট কর্মের নৈপুণ্যে যেন সে কথাগুলোরই জানান দিতে থাকে পুনঃপুন। ফলে দেখা গেল, জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে ওঠল। অথচ এ কথা সর্বজন বিদিত যে, রবীন্দ্রনাথ এই জাতীয়তাবাদকে প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করতেন। ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদকে তিনি একটি ‘দৈত্য’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এখন যে বিশ্বায়নের নামে পুঁজির নতুন ঢেউ এসেছে, তাও কিন্তু আধুনিকতার সূত্র ধরেই এসেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ডাবের পানি খাওয়া গ্রাম্যতা, কোক খাওয়া আধুনিকতা। এ ধরনের সূত্র আধুনিকতার নামে চলে এসেছে। এ জাতীয় আরোপিত সত্যকে প্রশ্ন করার কেউ ছিল না। আবার ধরুন, আধুনিকতার আরেকটা দিক হচ্ছে যে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখাটা গ্রাম্যতা। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখাটাকে যদি আমরা গ্রাম্যতা বলি, তবে জোর করে অনেকগুলো মানুষের বিশ্বাসের ওপর আঘাত হানছি। উত্তরাধুনিকতা, আদর্শবাদের নামে যে বিচলন দেখা দিচ্ছে তাকে এবং ইউরোকেন্দ্রিকতাকে প্রশ্ন করছে। মূলত একধরনের স্বচ্ছতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই উত্তরাধুনিকতার নিরলস সৃষ্টির আবির্ভাব। প্রতিষ্ঠানের নামে চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন যুক্তিতর্কের কাঠামোগুলোকে প্রশ্ন করছে। আধুনিকতার নামে যে অতিরঞ্জন হচ্ছে, অতিশয় উক্তি হচ্ছেএগুলোকে প্রশ্ন করছে। কাঠামোকে প্রশ্ন করছেকেন্দ্র কার? আপনি যে সভ্যতা ছড়াচ্ছেন তা কার সভ্যতা? এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়াটা হচ্ছে উত্তরাধুনিকতার ইতিবাচক দিক। অপরদিকে, নেতিবাচক দিকটি হলো, এটি দৃশ্য মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে ছড়াচ্ছে। দৃশ্যমাধ্যম উপরিতলসর্বস্ব। দৃশ্যমাধ্যম পশ্চিমের আরোপিত। যখন দৃশ্যমাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত হচ্ছে তখন দৃশ্যমাধ্যমের ওই বিষয়গুলোও চলে আসছে। কিন্তু এ ব্যাপারে উত্তরাধুনিকতাবাদ নিজেই নিশ্চিতভাবে বলছে, আমরা হচ্ছি সেই এক একটা বাদ, যার মৃত্যু নিশ্চিত। উত্তরাধুনিকতা সর্বদাই বাদগুলোকে প্রশ্ন করছে, একসময় সে নিজেকেও প্রশ্ন করছে। উত্তরাধুনিকতার মূল বিষয়টি হলো প্রশ্ন করা। স্থান কাল পাত্র ভেদে প্রশ্নের জন্ম, হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। যেমনআমরা প্রায়ই বলে থাকি জাতীয় সংস্কৃতির কথা, আসলে জাতীয় সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই। জাতীয় সংস্কৃতির নামে আমরা অকাতরে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর একাংশের ওপর অত্যাচার করছি। আবার তাদেরকে আদিবাসী বলেও আখ্যা দিচ্ছি। এটি হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি স্বেচ্ছাচারিতা। উত্তরাধুনিকতা এসব স্বেচ্ছাচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। উত্তরাধুনিকতার আরেকটা ইতিবাচক দিক হলো স্থানীয় বিষয়াবলিকে মূল্য দেওয়া, যা আধুনিকতার চোখে গ্রাম্যতা। উচ্চ শিল্প ও নিম্ন শিল্পের দ্বন্দ্ব সাহিত্যে প্রকট। যেমন রিকশা শিল্প হচ্ছে নিম্ন শিল্প আর ধরা যাক, শিল্পচার্য জয়নুলের ছবি উচ্চ শিল্প। নিঃসন্দেহে শিল্পচার্য জয়নুলের ছবি অত্যন্ত ভালো শিল্প কিন্তু এটা কয়জন লোক দেখছে, আর রিকশা শিল্প নিন্দনীয় হলেও প্রতিদিন হাজার মানুষ সেটা দেখছে, আন্দোলিত হচ্ছে। তাই এটিকে নিম্ন বলার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে? আর কোন বিবেচনায় আমি এটিকে নিম্ন বলব। উত্তরাধুনিকতা এই বিবেচনাগুলোকে প্রশ্ন করছে। এতে কিন্তু কোনো অরাজকতা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে না

শেষকথা, উত্তরাধুনিকতা একটি শিল্পশিল্পসমূহ আপনা থেকেই ঝরে যায়। আর শিল্পগুলো টিকে থাকে। যেমনআমাদের দেশের যে ব্যান্ড মিউজিক চলছে তা উত্তরাধুনিক একটি প্রতিভাত। তবে এর সবগুলো কি টিকে আছে? যেগুলো টিকে আছে সেগুলোই শিল্প ! উত্তরাধুনিকতার ক্ষেত্রে কেন্দ্রজন আর ব্রাত্যজনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যেমনসেলিম আল দীনসহ অনেকেই প্রান্তজনদের জীবনধারা নিয়ে নাটক লিখেছেনঅর্থাৎ উত্তরাধুনিকতাবাদে স্থানীয় বিষয়গুলো অনেক মূল্যায়িত হচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে, সময় এসেছে উচ্চ শিল্প ও নিম্ন শিল্পের ব্যবধান গোচানোর। সাহিত্যে উচ্চ শিল্প ও নিম্ন শিল্প বলে কিছু থাকা উচিত নয়। কেননা, আইনের মত সাহিত্যও সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করে

নিরদচন্দ্র চৌধুরীবাঙালীত্বের স্বরূপগ্রন্থে লিখেছেন , যে অনুকরণশীলতা বাঙালি মনের একটা সনাতন ধর্ম্ম  উত্তরাধুনিক কবিরা তার এই উক্তিকে যেন তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। উত্তরাধুনিকতার আরও একটু বিশদ ব্যাখ্যা করলে বলতেই হয়- ‘নাইবা শূন্য যার মূল। আবার কিছু নয় উদ্দিষ্ট তার। ভাষার বুনন হয় কিছুটা ভিন্নতর। উত্তরাধুনিক কবিদের উপমা ঠে আসে উৎপেক্ষার কাছাকাছি। কবিতা হয়ে পড়ে আরো বেশি শব্দ নির্ভর। পরিবর্তন হয় আঙ্গিকের। যদিও আঙ্গিকের বিচারই উত্তরাধুনিক কবিতা বিচারের মানদণ্ড নয়।

আরও সহজ করে বলতে গেলে বলতেই হয়, বাংলা কবিতা এখন একটু ভিন্ন ভাবে লেখা হচ্ছে। এই ভিন্নতাই উত্তরাধুনিকতা। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেমন ল্যান্ডফোন থেকে সেলফোন, টাইপরাইটার থেকে কম্পিউটার, এবং ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি; কবিতার ক্ষেত্রেও তেমনি একটি ভাষাগত, উপমানির্মাণের কৌশলগত, শব্দব্যবহারের চিন্তাগত একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে উপলদ্ধির ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক কবিতার থেকে জীবনানন্দ দাশ বা বুদ্ধদেব বসুর আধুনিক কবিতা আলাদা; তিরিশের কবিতারও যে অংশটি রোমান্টিকতা ঘেঁষা ভাষা বিন্যাসে জড়িয়ে ছিলো তাও মুক্ত করে দেন পঞ্চাশের শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী। আবার পঞ্চাশের কবিতা থেকে এক  ঝাঁক তরুণ কবিতায় নতুনত্ব আনয়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

উত্তরাধুনিক কবিতায় শুধুমাত্র কবিতার আঙ্গিক পরিবর্তন বা শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তন নয় নিশ্চয়ই। শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর নিশ্চয়ই প্রভাব আছে। একটি নতুন ধরনের শিল্প আঙ্গিকের যখন শুরু হয় তখন অন্যান্য শিল্পেও তার ছাপ থাকে, বিশেষ করে চিত্রকলায়। সে কারণেই কবিতা এবং চিত্রকলা তাত্ত্বিক দিক থেকে অনেক সময়ই কাছাকাছি থাকে।

আমাদের মনে রাখা উচিত একটি ইজমএর নাম যাই হোক না কেন সেটি তো এমনি এমনিই তৈরি হয়না। তার পেছনে একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। আর তখনই শিল্প একটি নতুন বাঁক নেয়। সেই নতুন বাঁকটিকে আমরা একটি নাম দেই। কাজেই সেই নামের চেয়েও তার পেছনের প্রেক্ষাপট জানাটা জরুরিউদাহরণ হিসাবে যদি আমরা রেনেসাঁ পরবর্তী রোমান্টিসিজম এর দিকে তাকাই তা হলে দেখব রাজনীতি তে রানী ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ এবং যুদ্ধে স্প্যানিশ আর্মাডার পতন, অর্থনীতিতে ইংল্যান্ড এর সাম্রাজ্য বিস্তার, ছাপাখানার আবিষ্কার, মার্টিন লুথারের ধর্ম সংস্কার, বিজ্ঞানে ফ্রান্সিস বেকনের গবেষণা ইত্যকার নানাবিধ প্রভাবের কারণে ঐ সময়টাতেই রোমান্টিসিজম বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ ছিল। আধুনিক শিল্পের পরে উত্তরাধুনিকতার বিকাশে কী কী ফ্যাক্টর কাজ করেছে সেটা জানলে উত্তরাধুনিকতা বুঝতেও সহজ হবে বলে আমি মনে করি।বহুল মত-পার্থক্য থাকার কারণে এটিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। আধুনিক কবিতা হল উপলব্ধির বিষয়, উত্তরাধুনিক কবিতা হচ্ছে উপলব্ধি শূন্যতার বিষয়। আধুনিক কবিতা যেমন সৃষ্ট চিত্রকল্পের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কোন অর্থ নয়, একটা উপলব্ধিকে পাঠকমনে চারিয়ে দেয়, অন্যদিকে উত্তরাধুনিক কবিতা প্রচলিত ফর্ম ভেঙেচুরে পাঠকমনের পূর্বলব্ধ কোন উপলব্ধিকে গুঁড়িয়ে উপলব্ধি শূন্যতার অনুভূতি তৈরি করে  দেয়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, উপলব্ধিশূণ্যতার উপলব্ধি তৈরি করাই উত্তরাধুনিকতাবাদী কবিতার লক্ষ্য।আধুনিক কবিতায় যেমন ভাব বা বিষয়ের একটা কেন্দ্র থাকে, উত্তরাধুনিক কবিতা সেই কেন্দ্রটাকে ভেঙে বা বিলুপ্ত করে অনেকগুলো কেন্দ্র তৈরি করে দেয়। ফলে পাঠক আর প্রচলিত পন্থায় কবিতা থেকে কোন একটি ভাব মিশ্রিত যে এককেন্দ্রিক রস আহরণ করবেন তার উপায় থাকে না। তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবে আধুনিক কবিতার বিষয়ের কেন্দ্রে থাকে মানুষ। কিন্তু উত্তরাধুনিক কবিতা সেই মানুষকে অস্বীকার করে সেখানে অনেকগুলো বিষয়কে নিয়ে একটা ঘুটা দিয়ে দেয়। এখানে কবির যেমন দায় পড়েনি কিছু বুঝানো বা কোন ম্যাসেজ সঞ্চালন করার, তেমনি পাঠকেরও দায় থাকে না কোন কিছু উপলব্ধি করার। নিটোল উপলব্ধিময় আধুনিকতার বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহী ভয়ঙ্কর উপলব্ধিশূণ্যতাই উত্তরাধুনিকতা।

আধুনিক যুগে জন্ম গ্রহণ করলেই যেমন আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য লালন ছাড়া আধুনিক হওয়া যায় না তেমনি উত্তরাধুনিক পর্বে এসে উত্তরাধুনিকতার বৈশিষ্ট্য ধারন না করে কবিতা লিখলেও তা উত্তরাধুনিক কবিতা বলে গণ্য হয় না। সাহিত্যের নানা দিক থেকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলেও ড. জফির সেতুর কাব্যগ্রন্থে উত্তরাধুনিকতার বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে তাঁর কাব্যগ্রন্থ আলোর বাতিঘর স্বরূপ।

(চলবে)

মুনশি আলিম
জাফলং, গোয়াইনঘাট,  সিলেট

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
অনুসরণ করুন:
কর্মজীবী এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!